জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, “এত ভাগ কিসের আবার? ছোট্ট একটা দেশে সবাই মিলে এক হয়ে জাতীয় স্বার্থে কাজ করা উচিত।” দেশের সকল নাগরিককে সমান মর্যাদার অধিকারী উল্লেখ করে তিনি শান্তিপূর্ণ এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।
গতকাল শনিবার রাতে সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় এক মতবিনিময় সভায় শফিকুর রহমান এ কথা বলেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে সিলেট মহানগর জামায়াত এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় দেশ ও জাতির জন্য একত্রে কাজ করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব ও সবার সমান অধিকার
শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা মেজরিটি-মাইনোরিটি মানি না। এ দেশের সকল নাগরিক সমান মর্যাদাবান। জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। কারণ দেশ বাঁচলে আমরাও বাঁচব।” তিনি আরও যোগ করেন, দেশের অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার ফলভোগ করতে হবে সবাইকে। তাই তিনি সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে একত্রিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব পালনে মালিকের মতো আচরণ নয় বরং পাহারাদারের মতো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। জামায়াতের কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জনগণের সেবাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। নির্বাচনের আগে ও পরে সম্পদের পরিমাণ সমান থাকতে হবে। অন্যের সম্পদের প্রতি লোভ না দেখানোর কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিগত ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ
জামায়াতের ওপর নানা নির্যাতনের অভিযোগ তুলে শফিকুর রহমান বলেন, “বিগত ১৩ বছর আমাদের অফিস সিলগালা ছিল, আমাদের প্রতীক ও নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এত চাপ অন্য কোনো দল ভোগ করেনি।”
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে দেশে দখলদারি-চাঁদাবাজি হয়েছে। এখনো সেই অবস্থা রয়ে গেছে। শুধু ফ্ল্যাগ বদল হয়েছে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি।
সংখ্যালঘু নির্যাতন ও গণমাধ্যমের ভূমিকা
শফিকুর রহমান দাবি করেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বেশিরভাগ ঘটনাই ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার। তিনি বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে, তবে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি মনে করেন, আইনের ভিত্তিতেই সবার চলা উচিত।
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সম্প্রদায়কে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চাই, যেখানে সব সম্প্রদায় শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।”
সভায় অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য
সভায় উপস্থিত হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা দেশের ঐক্য ও শান্তির বিষয়ে নিজেদের অভিমত তুলে ধরেন।
- সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজি বলেন, “দেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষ যদি এক হয়ে কাজ করে, তাহলে শান্তি বজায় থাকবে।”
- সিলেট বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ সংঘ্যানন্দ মহাথের বলেন, “ধর্মীয় সহাবস্থান ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।”
জাতীয় ঐক্যের পথে আহ্বান
শফিকুর রহমানের বক্তব্যে পরিষ্কার যে, দেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের ঐক্যই শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশের ভিত্তি। তিনি বলেন, “আমরা কোনো সম্প্রদায়কে বিভক্ত করতে চাই না। বরং সবার ঐক্যের মাধ্যমে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাই।”
মতবিনিময় সভার সঞ্চালনা করেন সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান। সভাপতিত্ব করেন সিলেট মহানগরের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন
শফিকুর রহমানের বক্তব্যে উঠে এসেছে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। তিনি বলেন, “আমরা শান্তির বাংলাদেশ গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ জন্য জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।”
আরও পড়তে
Share Now