ePaper

উল্লাপাড়ায় দর্শনার্থীদের থেকে সরিষাক্ষেত রক্ষায় লাঠি হাতে কৃষক

রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

উল্লাপাড়ায় চলনবিল অধ্যুষিত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখন সরিষা ফুলের মহাসমারহ। প্রতিদিনই এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অসংখ্য প্রকৃতি প্রেমী ভ্রমণ পিপাসু নারী পুরুষ ও শিশুরা সরিষার মাঠে। নানা সাজে, নানা আঙ্গিকে ছবি তুলছেন তারা। প্রেম ভালবাসার মানুষটির খোঁপায় গুজে দিচ্ছেন হলুদ সরিষার ফুল। সরিষা ক্ষেতে আনন্দে মেতে উঠছে তারা। অনেকে সরিষার মাঠে দাঁড়িয়ে সাথীদের নিয়ে ভিডিও করছেন আবার অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরিষার মাঠের লাইভ করছেন। কিন্তু এতে সমস্যায় পড়েছেন এসব সরিষা জমির মালিকেরা। সৌখিন লোকজনের দল বেধে সরিষার জমিতে যাতায়াত, দাঁড়িয়ে বা বসে ছবি তোলার কারণে সরিষা গাছ গুলো পদদলিত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরিষা জমির মালিকেরা বাধা দিয়েও তাদের জমিতে ছবি তোলা বন্ধ করতে পারছেন না। অনেক জমির মালিক ফসল বাঁচাতে জমির মাঝে প্রবেশ না করতে বা ছবি না তোলার জন্য সাইন বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন। অনেক জায়গায় নিরুপায় হয়ে সরিষা চাষী তার স্বজনদের নিয়ে লাঠি হাতে জমির পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন। বিশেষ করে উপজেলার কাশেম বিল, বাঁখয়া বিল, শ্রীকোলা, বড়হর, মোহনপুর, উধুলিয়া অঞ্চলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

উপজেলার বাখুয়া গ্রামের সরিষা চাষি সামাউন ইসলাম জানান, গত কয়েকদিনে তার সরিষার জমিতে বিভিন্ন শ্রেণির লোকজনের ছবি তোলার কারণে অনেক সরিষা গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে সরিষার জমিতে দল বেঁধে লোকজন যাতায়াত করলে এক মুঠো সরিষাও এবার তার ঘরে উঠবে না। পৌর সভার শ্রীকোলা মহল্লার সরিষা চাষি আব্দুল হালিম, জাকির হোসেন ও শাহ আলম জানান, এ বছর সরিষা ফুলের মধ্যে সৌখিন লোকজনের ছবি তোলার মাত্রা বেশি দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের জমিতে প্রবেশ না করে বাইরে থেকে ছবি তোলার কথা বললেও তা মানছেন না কৌতুহলী দর্শনার্থীরা। এ জন্য তাদের জমিতে ছবি না তোলার ব্যাপারে সাইন বোর্ডও ঝুঁলিয়ে দিয়েছেন তারা। তার পরেও ছবি তোলার মাত্রা না কমায় এখন তারা মাঠের পাশে তাদের স্বজনদের সাথে লাঠি নিয়ে সরিষার জমি দিনের বেলায় পাহারা দেওয়া শুররু করেছেন। উপজেলার পঞ্চক্রোশী এলাকা থেকে উধুনিয়া এলাকায় ঘুরতে আসা আব্দুল আলীম, সাকিব হোসেন, বৃষ্টি খাতুন ও বর্ষা খাতুন জানান, আসলে সরিষার জমির পাশ থেকে খুশি মত ছবি তোলা যায় না। ফলে তাদেরকে সরিষার জমির মাঝে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। এতে কিছু সরিষা অবশ্যই নষ্ট হয় বলে তারা স্বীকার করেন। সলপ এলাকা থেকে কাশেম একাধিক যুবক জানান, এর আগেও তারা চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় সরিষা মাঠে ছবি তুলতে এসেছেন। কিন্তু দিনের বেলা লাঠি নিয়ে সরিষার জমির পাশে চাষীদের দাঁড়িয়ে পাহারা দেবার দৃশ্য এবারই প্রথম তাদের চোখে পড়ল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী জানান, আসলে এ বছর চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় সরিষা ফুল দেখতে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করছেন। বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে জমিতে গিয়ে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। আবার কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরিষা ফুলের সৌন্দর্য লাইভ দেখাচ্ছেন। এতে সরিষার কিছু ক্ষতি হচ্ছে। তবে দর্শনার্থী কৃষকদের বিষয়টি মাথায় রেখে সচেতনভাবে সরিষা মাঠের আইলে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য আহবান জানান তিনি। এছাড়া সরিষা ক্ষেতের পাশে মানুষের ভিড় দেখে মধু সংগ্রহকারী মৌমাছি ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এতে সরিষার পরাগায়নে বাঁধা পরছে এবং এতে ফলন ও মধুর পরিমান কমে যাবে। প্রসঙ্গগতঃ বাংলাদেশে উপজেলা পর্যায়ে উল্লাপাড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতিবছর এখানে গড়ে ২৩ থেকে ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। ফলে চলনবিল অধ্যুষিত বিস্তীর্ণ এলাকার জমিতে ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে সরিষা ফুলের মহাসমারহ চোখে পড়ে। আর এখানে ঘুরতে ও ছবি তুলতে আসেন ভ্রমন পিপাসু বহু নারী-পুরুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *