হামিদুল্লাহ সরকার, নীলফামারী
নীলফামারীর উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রমিকদের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম হাবিবুর রহমান হাবিব (২১)। তিনি সদর উপজেলার সংলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে এবং উত্তরা ইপিজেডের ইকু ইন্টারন্যাশনাল (স্পিনিং অ্যান্ড কম্পোজিট) কোম্পানির কর্মী। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ জন। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফরহান তানভিরুল ইসলাম জানান, হাবিবের বুকে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। জানা যায়, উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রিন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি (বিডি) লিমিটেডের শ্রমিকরা চার দিন ধরে বেতন, ওভারটাইম ভাতা এবং ছাঁটাই শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছিলেন। আন্দোলনে ইপিজেডের অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরাও যোগ দেন। শনিবার ও রবিবার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সোমবার কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশ জারি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা ইপিজেডের মূল ফটকে প্রবেশের চেষ্টা করলে রক্ষীরা বাধা দেয়। এসময় তারা প্রধান সড়ক অবরোধ করলে নীলফামারী-সৈয়দপুর মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেন। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে হাবিবুর রহমান নিহত হন। আহতদের মধ্যে ছয়জনকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেনÑ মোমিনুর রহমান (২৫), শাহিন (২৬), নুর আলম (৩০), মোস্তাক আহমেদ (২৫), লিপি আক্তার (২৬) ও জমিলা খাতুন (৩৫)। সংঘর্ষ চলাকালে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। শ্রমিকরা মোট ২৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেÑ উৎপাদন টার্গেট কমানো, ওভারটাইম নিশ্চিত করা, ছুটি যথাযথভাবে দেওয়া, বেতন ও ভাতা সময়মতো পরিশোধ, আবাসন ও প্রমোশনের জটিলতা নিরসন, গর্ভবতী শ্রমিকদের বিশেষ সুবিধা প্রদান, নারী শ্রমিকদের নির্যাতন বন্ধ করা এবং ক্ষুদ্র কারণে চাকরিচ্যুত না করা। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের এসব দাবি উপেক্ষিত হয়েছে, অথচ কর্তৃপক্ষ আলোচনা না করে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। নিহতের বড় ভাই আশিকুর রহমান বলেন, “আমার ভাই রাতে ইকু ইন্টারন্যাশনালে কাজ শেষ করে সকালে বের হচ্ছিল। এসময় সে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।” এদিকে এসব বিষয়ে জানতে এভারগ্রিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য দেননি। উত্তরা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বারকেও পাওয়া যায়নি। নীলফামারী সদর থানার ওসি এম আর সাঈদ বলেন, “আমরা এখনো সড়কে আছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি।” তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
