ePaper

ইসিকে দায়বদ্ধ করার কথা ভাবছে কমিশন

ইসিকে দায়বদ্ধ করার কথা ভাবছে কমিশন, নির্বাচনী অপরাধের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতার প্রস্তাব তৈরি করছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
ইসিকে দায়বদ্ধ করার কথা ভাবছে কমিশন। নির্বাচনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে আরপিওতে সংশোধনী আনার প্রস্তাব।

ইসিকে দায়বদ্ধ করার কথা ভাবছে কমিশন। ইসিকে দায়বদ্ধ করার প্রস্তাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। অতীতের বিতর্কিত তিনটি জাতীয় নির্বাচন এবং ইসির ভূমিকা পর্যালোচনা করে এ সংক্রান্ত সুপারিশ তৈরিতে কাজ করছে এই কমিশন। তবে এখনো ব্যবস্থা গ্রহণের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও তার কার্যক্রমে দায়বদ্ধতার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন বলছে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইসিকে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য আরপিওতে সংশোধন আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

ইসির বর্তমান কাঠামো এবং দায়বদ্ধতার অভাব

বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, ইসির সদস্যদের অপসারণ করার বিধান রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের মতো একই পদ্ধতিতে ইসির কমিশনারদের অপসারণ করা যায়। তবে কোনো কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও তদন্ত বা ব্যবস্থা নেওয়ার সুনির্দিষ্ট বিধান নেই।

সাম্প্রতিক নির্বাচনী ব্যবস্থার ত্রুটি ও ইসির ভূমিকার সমালোচনা করে বলা হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের শপথ ভঙ্গ করেছে পূর্ববর্তী কমিশনগুলো। বিশেষ করে, ২০১৮ সালের ‘রাতের ভোট’ এবং ২০২৪ সালের ‘পাতানো নির্বাচন’ দেশের গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করছে যে, নির্বাচনী অপরাধের জন্য নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রাখা উচিত। এজন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধন আনা হতে পারে। এ ছাড়া ইসির ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বর্তমান ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

ইসির ক্ষমতা খর্ব করার বিষয়েও আলোচনা চলছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের সংশোধনীর ফলে ভোটের দিনই নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এটি পূর্বের মতো তফসিল ঘোষণার পর যে কোনো সময় বন্ধ করার ক্ষমতা পুনর্বহাল করার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে নারাজ বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে তা দেখে মতামত দেওয়া হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “ভুয়া নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশনগুলো পার পেয়ে গেছে। এ ধরনের দায়িত্বহীনতা বন্ধে ইসিকে দায়বদ্ধতার আওতায় আনার ব্যবস্থা জরুরি।”

ইসির ভবিষ্যৎ কাঠামো

নির্বাচনী অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা দায়েরের সময়সীমা ছয় মাস থেকে আরও বাড়ানো বা তুলে দেওয়ার প্রস্তাবও আসছে। পাশাপাশি, সংবিধানের অভিভাবক সুপ্রিম কোর্টের অধীনে ইসির কার্যক্রম নিয়ে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ইসি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও তার কার্যক্রমে দায়বদ্ধতার জায়গা থাকা দরকার। তবে দায়বদ্ধতার কাঠামো এমন হওয়া উচিত, যাতে কমিশনের স্বাধীন কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”

সংস্কারের লক্ষ্য

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিবেদনে ইসির কার্যক্রমে জবাবদিহিতা আনার পাশাপাশি তার ক্ষমতা আরও কার্যকরভাবে প্রয়োগের সুপারিশ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উপসংহার
নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করার প্রস্তাব দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল।

Share Now

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *