ePaper

আমরা কচুরিপানা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই ইছামতি নদীর উৎপত্তিস্থল কাশিয়াখালি ও কার্তিকপুরে স্লুইসগেট স্থাপনের দাবি

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি.

কচুরিপানার কারনে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহারের ইছামতি নদীর পাড়ের মানুষের। নদীতে স্রোত না থাকায় কুচরিপানায় সয়লাব ইছামতি নদীর বিভিন্ন অংশ। বিশেষ করে ধাপারী বাজার থেকে বান্দুরা হয়ে শিকারীপাড়া বেড়িবাঁধ পর্যন্ত ও দোহারের কার্তিকপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান কচুরিপানার স্তূপে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, কচুরিপানা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তারমধ্যে নদীতে স্রোত না থাকায় বড় হয়ে এগুলো স্তূপে পরিণত হয়ে গেছে। অনেক স্থানে কচুরিপানা পঁেচ নষ্ট হয়ে গেলে পানি, ছাড়াচ্ছে র্দুগন্ধ। পানির এমন অবস্থা মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছে নদী সংশ্লিষ্ট জেলে পরিবার। পানি না থাকায় এবং কচুরিপানার কারনে পানি নস্ট হয়ে যাওয়ায় ইছামতি নদীর এ অংশের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না এ অঞ্চলের মানুষ। কচুরিপানার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান এ অঞ্চলের মানুষ।

ইতিমধ্যে ইছামতি নদী থেকে কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন ইছামতি নদীর কচুরিপানা অপসারণ কমিটি। এদের সাথে একতা প্রকাশ করেছে সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম ও নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি। এ তিন সংগঠনের সমন্বয়ে এবার ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শিকাড়িপাড়া ইউনিয়নের ইছামতি নদীর নারায়নপুর-দাউদপুর পয়েন্টের কচুরিপানা অপসারণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টায় ইছামতি নদীর কচুরিপানা অপসারণের এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। কার্যক্রমের বিভিন্ন পেশাজীবির মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

কর্মসূচিতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ইছামতি নদীর কচুরিপানা অপসারণ কমিটির উদ্যোক্তা মো. খালেদ বিন ওয়াহিদ কনক। এসময় তিনি বলেন, একেবারে নদীর পাড়েই আমার বাড়ি। এক সময় এই নদী আমাদের জন্য আর্শীবাদ ছিল। নদীর ঢেউ আর ছলছল শব্দে সে কি ভালো লাগতো। কিন্তু গত দুই যুগ ধরে নদীতে আগের মতো আর পানি নেই, স্রােত নেই। এরফলে প্রায় বছরই নদী কচুরিপানায় আটকে থাকে। একসময় কচু পচে পানি নষ্ট হয়ে যায়। পানি থেকে গন্ধ ছড়ায়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং দায়িত্ববোধ থেকে আমি আমার এলাকার নদী পরিস্কারের জন্য এলাকার কিছু স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠিত করি। এরপর ইছামতি নদীর কচুরিপানা অপসারণ কমিটির প্রধান উদ্যোক্তা রাশিম মোল্লাকে আমার এলাকার নদী পরিস্কারের আহ্বান জানাই। তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন।

এসময় ইছামতি নদীর কচুরিপানা অপসারণ কমিটির সমন্বয়ক মো. রাশিম মোল্লা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে জোর দাবি জানিয়ে বলেন, মৃত প্রায় ইছামতি নদীতে বাঁচাতে দ্রুত সোনাবাজু-কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ ও কার্তিকপুরে নদীর মূল অংশে প্রয়োজনীয় স্লইচগেট স্থাপন করতে হবে। একইসঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে কচুরিপানা অপসারণের দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা তিনটি সংগঠনের উদ্যোগে আজ ইছামতি নদীর নারায়নপুর-দাউদপুর অংশের কচুরিপানা অপসারণের কার্যক্রম শুরু করেছি। এভাবে পরিষ্কার করব নবাবগঞ্জ উপজেলার কাশিয়াখালি বেরিবাঁধ থেকে বান্দুরা পর্যন্ত এবং দোহার উপজেলার কার্তিকপুর থেকে বান্দুরা পর্যন্ত ইছামতি নদীর ১০টি পয়েন্টের কচুরিপানা। এরপর তুইতাল, বারুয়াখালী, শিকাড়িপাড়াা, জয়কৃষ্ণপুর কার্তিকপুর, কাচারিঘাট ও বান্দুরাসহ আরো কয়েকটি পয়েন্ট।

রাশিম মোল্লা আরও বলেন, আমরা পুরো ইছামতি নদী পরিষ্কার করতে পারবো না, কিন্তু একটি পথ দেখিয়ে যাচ্ছি। সম্মিলিতভাবে যদি চেষ্টা করি তাহলে কিন্তু অনায়াসেই কচুরিপানার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবো আমরা। আর সেজন্য নদীপাড় ও সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।

সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ আলম বলেন, ইছামতি নদীকে রক্ষা করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে নিজেদের আরো অনেক সচেতন হতে হবে নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে।

সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের খালিদ হোসেন সুমন, কচুরিপানা অপসারণ কমিটির সেচ্ছাসেবক মো. ওমর ফারুক, নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক দুলাল দেওয়ান, শিকাড়িপাড়া টিকেএম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ, দাউদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান খান, নারায়ণপুর জামে মসজিদের খতিব হযরত মাওলানা আব্দুল মতিন, মসজিদ কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য জমির উদ্দিন মন্ডল, বিভিন স্কুলের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *