ePaper

আত্মগোপনে থাকা সিদ্ধিরগঞ্জের যুবলীগ নেতা ঢাকায় গ্রেফতার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি ও তার ছেলে বাবুইকে গ্রেফতার করেছে ভাটারা থানা পুলিশ। গতকাল সোমবার ভোর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতর করা হয়। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন হক। গ্রেফতারকৃত মতিউর রহমান সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়া আইলপাড়া এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে। গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, রাজধানী ঢাকার ভাটারা ও যাত্রাবাড়ী থানায় একাধিক হত্যা মামলা করা হয়। তার ছেলে বাবুইকেও কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সজুন হক জানান, গ্রেফতার মতিউর রহমানকে ভাটারা থানায় করা একটি হত্যা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা হত্যা ও হত্যাচেষ্টাসহ মোট ৪৫ টি মামলার প্রতিটিতেই মতিউর রহমান মতি এজাহারনামীয় আসামি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর আলম বলেন, মতিউর রহমানকে ভাটারা থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমরা ভাটারা থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা বহু হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে বেশ কিছুদিন জেল হাজত বাস করেছিলেন মতি। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ধারায় মতি ও তার স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছিলেন দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম। দুদক সূত্র জানায় মামলাটি চলমান রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশির দশকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমুলপাড়া এলাকায় মুনলাইট সিনেমা হলের টিকিট বেচতেন মতি। পরে তৎকালিন জাতিয় পার্টি নেতা সফর আলী ভূ্য়াঁর হাত ধরে নাম লিখায় রাজনীতিতে। নব্বই দশকে এসও এলাকায় বিএনপির মিছিলে মোবা হামলা করে আলোচনায় আসেন মতি। ওই বোমা হামলায় মনা নামে এক পথচারী নিহত হয়েছিলেন। তার দুই বছর পর নিজ বাড়িসংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের উপর শাহ আলম বাবু নামে এক যুবককে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করার পর থেকেই মতি এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিতি পায়। এরপর জাতীয় পার্টি ছেড়ে যোগদেন যুবলীগে। যুবলীগে যোগ দিয়েই এলাকায় শুরু করেন বেপরোয়া চাঁদাবাজি। গড়ে তুলেন অপরাধ জগতের সাম্্রাজ্য। ২০০১ সালে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান বিদেশে। পরে অওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ২০০৯ সালে মতি দেশে এসে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আত্নসমর্পন করলে তাকে জেলে যেতে হয়। প্রায় ১ বছর জেল হাজত বাস করে জামিনে বের হন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক পদ পাওয়ার পরই বদলে যায় তার ভাগ্য। ২০১৬ সালে নাসিকের নির্বাচনে হন ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। হয়েছিলেন ২ নং প্যানেল মেয়র। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি সিটি নির্বাচনেও তিনি কাউন্সিলর বিজয়ী হন। একদিকে জনপ্রতিনিধি অপর দিকে থানা যুবলীগের আহ্বায়ক হওয়ায় ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন মতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *