বাবুল আহমেদ,মানিকগঞ্জ
অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় আখ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। জেলার সদর উপজেলা, ঘিওর, সিংগাইর ও সাটুরিয়া উপজেলায় আখ চাষ হয়। আর এই আখ বিক্রির জন্য জেলায় বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে তরা হাট। প্রতি সপ্তাহে এ হাটে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার আখ। বাজারে আখের চাহিদা বেশি এবং দাম ভালো হওয়ায় আখ চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। আখ চাষে চাষিদের আগ্রহের আরেকটি বড় কারণ এই চাষে পরিচর্যা লাগে কম। এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে আখ। আগামী কার্তিক মাস পর্যন্ত চলবে আখ কাটার কাজ। আখের চারার ফাঁকে ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে চাষিরা সরিষা, মরিচসহ অন্যান্য ফসলও চাষ করে থাকেন। এসব সাথী ফসল দুই-তিন মাসের মধ্যেই বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়। আর আখ পরিপক্ব হতে সময় লাগে আরো কয়েক মাস। আখের সবচেয়ে বড় বাজার বসে মানিকগঞ্জ তরা হাটে। এখানে সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দুই দিন আখ কেনাবেচা হয়। প্রতি সপ্তাহে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। ভোর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিরা আখ নিয়ে বাজারে আসেন। মানিকগঞ্জ জেলার চাষকৃত আখের ৬০ শতাংশ আখই যায় ঢাকার বিভিন্ন বাজারে। প্রতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে এই আখ সরবরাহ করা হয়। আর এ হাট থেকেই বড় বড় ট্রাক বোঝাই করে আখ চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার খাগড়াকুড়ি, ঘিওর, তরা, কুটাই, উত্তর তরা, মাইজখাড়া, লঙ্গনপুর, দোলাপাড়া, পাথরাইল, নকিব বাড়ি, গিলন্ড, বাগজান, মূলজান, করচাবাধা, ঘোস্তা, বালিয়াবাধা, হেলাচিয়া, নারিকটি, চানপুর, গোপালপুর, বাংলাদেশ হাট, তিল্লি, ডাউটিয়া, আলীনগর প্রভৃতি এলাকায় আখ চাষ হয়ে থাকে। আখের ব্যাপারী সামাদ কাজী জানান, তরায় সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। এই দুই দিনেই কমপক্ষে ১০ ট্রাক আখ চালান হয় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। এই হাটে আখ বিক্রি হয় শ হিসেবে। আখের প্রকার ও ভালোমন্দ অনুযায়ী প্রতি পিস দাম হয় ১০ থেকে ২০ টাকা। এই হিসেবে প্রতি ১০০ পিস আখ বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। তিনি জানান, মানিকগঞ্জে চানপুরা, নলঠেঙ্গা, সাতাইশ এবং বোম্বাই জাতের আখ বেশি চাষ করা হয়। আখ কিনতে আসা ঢাকার কাওরান বাজারের পাইকার মজনু বিশ্বাস জানান, অপেক্ষাকৃত ভালো মানের, পরিবহনের সহজলভ্যতা এবং কম দাম হওয়ায় তারা এই হাট থেকেই আখ কেনেন। পরিবহন ভাড়া যোগ করে ঢাকায় তারা প্রতিটি আখ আকার ভেদে বিক্রি করেন ৩০ থেকে ৫০ টাকা। গিলন্ড এলাকার কৃষক মো. সমেজ উদ্দিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, তিন বিঘা জমিতে চাষ করে তিনি পেয়েছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকার কিছু বেশি। আখের ফলন তুলতে সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর। তবে আখ খেতে থাকতেই সাথী ফসল হিসেবে বেশ কিছু সবজির চাষ করা যায়। আখের জন্য যে সার দেওয়া হয় সেই সারেই সবজি চাষ হয়ে যায়। মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সবচেয়ে বেশি আখ চাষ হয়ে থাকে সিংগাইর উপজেলায়।