ePaper

অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না, নতুন বছরে সরকারের ১১টি করণীয়

অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না, নতুন বছরে সরকারের করণীয়।
অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না, ২০২৪ সালের শুরুতে দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলায় সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ প্রয়োজন।

অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না, নতুন বছরে সরকারের ১১টি করণীয়

অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না, ২০২৪ সালের শেষ দিনও রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে টিসিবির ট্রাক থেকে বিক্রি হতে থাকা পণ্যগুলোর সামনে দীর্ঘ লাইন ছিল। এর মধ্য দিয়ে বেশিরভাগ মানুষ কিছুটা সাশ্রয়ী দামে পণ্য কেনার চেষ্টা করছেন, কিন্তু মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালের শুরুতে মানুষের মনে একই উদ্বেগ। পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে, চাকরি খোঁজা তরুণরা হতাশ, আর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থির।

বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক বছর ধরেই সংকটের মধ্যে রয়েছে। দেড় দশক ধরে চলা অর্থ পাচার, ব্যাংক সংকট, ঋণখেলাপি এবং নানা ধরনের আর্থিক অপরাধে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ২০২৪ সালের নতুন বছরে সরকারের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে।

১. অর্থনৈতিক সংস্কার সম্পন্ন করা

বিদায়ী সরকারের সময় বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ছিল লুটপাটের শিকার। শ্বেতপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে দেশের বাইরে। এই অর্থ পাচার এবং ব্যাংক সংকট কাটাতে সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যাংক খাতে সংস্কার চালু করতে হবে।

২. মূল্যস্ফীতির রাশ টানা

মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে ব্যাপকভাবে। এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শুধু সুদের হার বাড়ানোর মাধ্যমে নয়, সরবরাহব্যবস্থার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। কৃষি খাতে বিনিয়োগ এবং স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করাও জরুরি।

৩. রাজস্ব খাতের সংস্কার

রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য সরকারের রাজস্ব খাতে সংস্কার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি ঋণের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে, সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব হলে বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হবে এবং অর্থনীতিতে কিছুটা শিথিলতা আসবে।

৪. বিনিয়োগ বৃদ্ধি

বিনিয়োগের অভাব একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সরকারের সক্ষমতার বিষয়ে কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে, যার কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। ব্যবসায়ী মহল আস্থার সংকটে রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক রোডম্যাপ উদ্যোক্তাদের জন্য স্পষ্ট বার্তা দিতে পারে।

৫. শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

শিল্পাঞ্চলে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তার প্রতিকার জরুরি। নতুন বছরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য একটি নিরাপদ এবং স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।

৬. জ্বালানি ও পরিষেবা খাতের উন্নয়ন

বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এর পাশাপাশি, অন্যান্য সার্ভিস এবং অবকাঠামোর উন্নতি করলে দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের গতি বাড়ানো সম্ভব হবে।

৭. কৃষি খাত চাঙ্গা করা

অর্থনীতিতে সংকট কাটাতে কৃষি খাতের উন্নতি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। খাদ্য শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটাতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে হবে।

৮. শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন ধরে কারসাজির কবলে রয়েছে। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতির সম্মুখীন। শেয়ারবাজারকে স্বাভাবিক ও স্বচ্ছ করতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা আস্থার সাথে বিনিয়োগ করতে পারেন।

৯. ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। এই সম্পর্কের উন্নতির মাধ্যমে নতুন উদ্যোগ গ্রহণে সহায়তা মিলবে, যা পরবর্তীতে দেশের অর্থনৈতিক চিত্র পরিবর্তন করতে সহায়ক হবে।

১০. সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা

লুটপাট বন্ধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনবে, বরং রাজনৈতিক অস্থিরতাও কমাতে সহায়তা করবে।

১১. কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা

সরকারকে আগামী ৬ মাস এবং ১ বছরের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করতে হবে। এতে অর্থনীতি নিয়ে সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণ স্পষ্ট ধারণা পাবে।

শেষ কথা

২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা মোকাবিলায় সরকারের জন্য রয়েছে একাধিক চ্যালেঞ্জ। তবে যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয় এবং ১১টি করণীয় বাস্তবায়ন করা যায়, তবে আগামী বছরগুলোতে দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হতে পারে।

Share Now

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *