ePaper

অনিয়ম-দুর্নীতির আঁখড়া সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ইয়াকুব নবী ইমন, সোনাইমুড়ী

অনিয়ম আর দুর্নীতির আঁখড়ায় পরিণত হয়েছে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্স। রোগীর রেজিস্ট্রারে ভুয়া নাম অর্ন্তভুক্ত করে খাবারের বিল উত্তোলন, হাসপাতালের বরাদ্ধকৃত ঔষধ আত্মসাৎ এবং বকশিসের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, রোগীদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি প্রসব ব্যাথা নিয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে আসেন ঘোষকামতা গ্রামের রিক্সাচালক শাহজাহানের স্ত্রী সীমা আক্তার (১৮)। কিন্ত সেখানে সুচিকিৎসা না পেয়ে স্বজনরা তাকে স্থানীয় নিউ নূরানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে নরমালে সন্তান প্রসব করেন তিনি। তিনি চিকিৎসা না পেলেও সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তিকৃত রোগীর তালিকায় (রেজিস্ট্রেশন নং- ৬০৪৫/৫) তার নাম অর্ন্তভূক্ত করে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপজেলার হাসানপুরের অটো রিক্সা চালক সবুজ জানান, তার স্ত্রী মিতু আক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সন্তান প্রসব করেন। প্রসব পরবর্তী হাসপাতালের স্টাফরা তার কাছে ৩ হাজার টাকা বকশিস দাবি করলে তিনি ৫’শ টাকা দেন। একই অভিযোগ করে ধন্যপুরের আল-আমিন জানান, বিগত ২৫ অক্টোবর দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেন তার স্ত্রী আবিদা ইসলাম (২২)। হাসপাতালের ডেলিভারি বিভাগে তার স্ত্রীর রেজিস্ট্রেশন নং ৫৯৯৪/৬। কিন্ত বাচ্চা প্রসবের পর ডাক্তার-নার্সরা তার কাছে ৫ হাজার টাকা বকশিস দাবি করেন। পরে ৪ হাজার টাকায় ডাক্তার-নার্সদের সাথে বিষয়টি রফা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে খাবার সরবরাহকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খান ট্রেডার্সের সাথে যোগসাজশে ভুয়া রোগী দেখিয়ে অতিরিক্ত খাবারের বিল উত্তোলন ও টাকা আত্মসাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে আনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্টাফ জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ইসরাত জাহান যোগদানের পর হাসপাতালে ডেলিভারী বিভাগ চালু করেন। সরকারিভাবে রোগীদের জন্য বিনামূল্য ঔষধ প্রদানের নিয়ম থাকলেও তা-না করে বরং প্রেসক্রাইবকৃত ঔষধ কিনতে চুক্তিভিত্তিক স্থানীয় একটি ফার্মেসীতে পাঠানো হয় রোগী ও তার স্বজনদের। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৬ সালে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাবার সরবরাহের টেন্ডার নেন খান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী জহির খান। পরে তিনি নামমাত্র আদালতে একটি মামলা দায়ের করে গত ১৮ বছর টেন্ডার ছাড়াই হাসপাতালের রোগীদের নিন্মমানের খাবার সরবরাহ এবং বিল উত্তোলন করে চলেছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে খান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী জহির খানকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়। সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডা. রিয়াজ উদ্দিন জানান, হাসপাতালে ভুয়া রোগী ভর্তি দেখিয়ে অতিরিক্ত খাবারের বিল উত্তোলনের বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ইসরাত জাহান জানান, আমাদের কাছে কোন রোগী বা স্বজন অভিযোগ করেনি। আমরা সরকারী নিয়ম মতেই হাসপাতালের রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কোন অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, হাসপাতালে কিছু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *