হাওর অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি ধান চাষে কৃষক আগ্রহ তৈরিতে গাকৃবিতে বিশেষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সাইফুল্লাহ গাজীপুর

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাকৃবি) “বাংলাদেশের হাওর (মিঠা পানির জলাভূমি) অঞ্চলে আকস্মিক বন্যাপ্রবণ পরিবেশে কৃষকদের স্বল্প-মেয়াদি ধান চাষে আগ্রহ বুঝার বিষয়ে ফলাফল প্রকাশনা কর্মশালা” শিরোনামে বিশেষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে এবং নেপালি প্রতিষ্ঠান আইসিআইএমওডি ও এসএএনডিইই সার্বিক অর্থায়নে কর্মশালাটি গতকাল সোমবার বিশ্বদ্যিালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার উদ্দেশ্য হলো গবেষণার ফলাফল শেয়ার করা, স্বল্প মেয়াদী ধান চাষে কৃষকদের সুবিধা বোঝানো, চাষাবাদ কৌশল ও সমাধান কৌশল সরবরাহ করা এবং আলোচনা ও মতামত গ্রহণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. কাজী তামিম রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাকৃবির উপাচার্য প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাকৃবির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. ময়নুল হক, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. সফিউল ইসলাম আফ্রাদ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী এবং এ প্রকল্পের প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. সাদিক রহমান এবং প্রকল্পের সহযোগী পি আই ও কর্মশালার সঞ্চালক গাকৃবির এগ্রিবিজনেস বিভাগের প্রফেসর ড. দেবাশিস চন্দ্র আচার্য্য। গুরুত্বপূর্ণ এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন গাকৃবির বিভিন্ন অনুষদীয় ডিন, পরিচালকবৃন্দ, বাংলাদেশ ধান গবেষণাকেন্দ্র (ব্রি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা) থেকে আগত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ। অনুষ্ঠানের শুরুতে ড. সাদিক রহমান প্রকল্পের উপর গবেষণার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। গাকৃবির মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় সম্পন্ন করা এ প্রবন্ধ উপস্থাপনায় দেখানো হয়, গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী হাওর অঞ্চলে চাষকৃত স্বল্পমেয়াদি বোরো ধানের জাতসমুহ আকস্মিক বন্যা হতে কৃষকদের রক্ষা করার উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক না হওয়াই কৃষকরা চাষে আগ্রহী না। গবেষণায়ে দেখা গেছে যদি হেক্টর প্রতি উৎপাদন খরচ ৮০০০ টাকা কমানো যায় অথবা হেক্টর প্রতি ফলন ১১২ কেজি বাড়াতে সক্ষম হলে হাওর অঞ্চলের কৃষকরা স্বল্প মেয়াদি বোরো ধান চাষ করে লাভবান হবে। তাই গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে কম খরচে উৎপাদন যোগ্য ধানের জাত উদ্ভাবনে জোর দেওয়া উচিত। গবেষণায়ে আর দেখা গেছে যে সমস্ত হাওর এলাকায়ে স্বল্প মেয়াদি বোরো ধান চাষের আওতায়ে না এনে এলাকা ভিত্তিক সম্প্রসারনে জোর দেয়া উচিত। পরে উপস্থাপনার উপর উপাচার্যের পরিচালনায় একটি উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয়। পরে কর্মশালায় অতিথিবৃন্দ এ প্রকল্প বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, এটি এমন একটি কর্মশালা যা হাওর অঞ্চলের কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের কৃষির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে কীভাবে আমরা বন্যাপ্রবণ পরিবেশে কৃষকদের জন্য উপযোগী ধান চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে পারি। উপাচার্য আরো বলেন, আজকের গবেষণা কৃষকদের স্বল্প-মেয়াদি ধান চাষে উৎসাহিত করার জন্য নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, কৃষকদের জন্য এমন প্রযুক্তি ও কৃষি পদ্ধতি প্রবর্তন করা যা তাদের আবাদী জমি বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *