ePaper

সোনাইমুড়ীতে সরকারী সম্পত্তি দখলের মহোৎসব

ব্যবস্থা নিচ্ছেনা প্রশাসন

ইয়াকুব নবী ইমন, নোয়াখালী

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় সরকারী সম্পত্তি দখলের মহোৎসব চলছে। সরকারি খাল, সড়ক- মহাসড়কের পাশের সরকারি সম্পত্তির ওপরে তৈরী হচ্ছে মার্কেট, দোকান ও পাকা স্থাপনা। গত ৫ই আগষ্টের পর থেকেই দখলের এই মহোৎসব শুরু হয় উপজেলার সর্বত্র। দখল হচ্ছে সরকারি খাম সম্পত্তিও। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কার্য়কার প্রদক্ষেপ গ্রহন না করায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভূমিদস্যুরা।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া সড়ক সংলগ্ন বিজয়নগর পশ্চিম পাড়া খাল দখল করে খালের ওপরে পাকা দোকান তোলা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারীর শুরুতে এই দখল ও স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করে দখলদাররা। উপজেলার সতের মাইল এলাকার সোনাইমুড়ী-চাটখিল সড়কের পার্শ্ববর্তী খালের জমি দখল করে মার্কেট তৈরী হচ্ছে। উপজেলা ভূমি অফিসের প্রাচীর ঘেষে টিন ও তেরপাল দিয়ে প্রায় ১০ শতাংশ খাস সম্পত্তি দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা। গত ৬ জানুয়ারী উপজেলার বজরা গ্রামের আমিশাপাড়া-বজরা সড়কের পাশে আমিশাপাড়া-দিঘিরজান খাল দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেন মালেক মুনসীর মোড় এলাকার আজিজ আহম্মেদ। খালের পাড় দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করেন তিনি। সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া সড়কের বিজয়নগর এলাকার তোফাজ্জল মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন তার বাড়ির সামনের খাল জুড়ে মার্কেট নির্মাণ করছেন। ইতিমধ্যে তিনি তিনটি দোকানের নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন। অন্যদিকে উপজেলার সতের মাইল এলাকার সোনাইমুড়ী-চাটখিল রোডের পাশে তেরপাল দিয়ে ঘিরে লোকচক্ষুর আড়াল করে তোলা হচ্ছে পাকা দোকান। কৌশল্যারবাগ ভূইয়া বাড়ির আব্দুল বারেকের ছেলে হানিফ মিয়া ও নাবালক মিয়ার ছেলে সারোয়ার মিয়া তুলছেন এই স্থাপনা। সড়ক ও খালের প্রায় ৪০ শতক সরকারি জমি দখল করে তৈরী করা হচ্ছে দোকানগুলো। এছাড়া খোদ ভূমি অফিসের গা ঘেঁষা ভুলুয়া খালের জমি দখল করে টিন ও তেরপার দিয়ে ঘিরে রেখেছেন রামদাশ নামের এক ব্যক্তি। প্রায় ১০ শতক খাস জমি দখল করে রেখেছেন তিনি। এভাবেই এই খালের অধিকাংশ অংশ দখল করে রেখেছেন রামদাসের স্বজনেরা। তবে অজানা কারনে এসব সরকারি জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা উপজেলা প্রশাসন। যে কারনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ভূমিদস্যুরা। সোনাইমুড়ী-ছাতারপাইয়া রোডের খাল দখলের বিষয়ে দখলদার শাহাদাত হোসেন জানান, খালের ভেতরে তাদের জমি রয়েছে। এছাড়া যতটুকু তারা দখল করে দোকান তুলছেন সেটুকু জেলা পরিষদ থেকে লিজ নিয়েছেন। সরকারি খাল কিভাবে জেলা পরিষদ থেকে লিজ নিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি চুপ থাকেন। সোনাইমুড়ী-চাটখিল সড়কের পাশের খালের জায়গা দখল করে দোকান তোলা হানিফ মিয়া জানান, জেলা পরিষদ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে লিজ এনেছেন জানুয়ারী মাসে। পরিষদের সার্ভেয়ার ইমরানকে টাকা দিয়ে লিজ নিয়েছেন বলেও জানান তিনি। স্থানীয়রা জানায়, ৫ই আগষ্টের পর আওয়ামী লীগের দখলদারেরা পালিয়ে গেলে দখল বন্ধ হচ্ছেনা। নতুন নতুন দখলদার-ভূমিদস্যুরা খাল ও সড়কের সম্পত্তি দখল করছে। এসকল দখলকারীদের বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছেনা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। যে কারনে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। খাল দখলের কারনে আগামী বর্ষায় পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হলে চরম ভোগান্তিতে পড়বে উপজেলাবাসী। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আকতার ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) দ্বীন আল জান্নাতের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। তবে জেলা প্রশাসন খন্দকার ইসতিয়াস আহমেদ জানান, বিষয়টি আমাদেরে নজরে এসেছে। দ্রুত অবৈধ দখলদারদের বিরদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *