ePaper

সিরাজগঞ্জে ইছামতী ও হুড়াসাগর নদী এখন ফসলের মাঠ

রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছিল হুড়াসাগর, ইছামতী, ফুলজোড়সহ ছোট ছোট অনেক নদী। কিন্তু কালের বিবর্তনে ভরাট হয়ে নদীগুলোর প্রাণ বিলীনের পথে। নাব্য-সংকটে নদীর বুকে আবাদ হচ্ছে নানা ফসল। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে অনেক নদী। এক সময়ের খরস্রোতা নদীর বুক জুড়ে দেখা দিয়েছে সবুজ ফসলের মাঠ। শুকনো মৌসুমে পানি নেই, বর্ষা মৌসুমে এসব নদীই আবার দুই কূল ছাপিয়ে দুর্দশার কারণ হয়। বর্ষার পানি ধারণ ক্ষমতা নেই বেশির ভাগ নদীর। এতে বর্ষা মৌসুমে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। নদীগুলো খননের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, ইছামতী ও হুড়াসাগর নদীতে একসময় অনেক স্রোত ছিল। বড় বড় নৌকা, ট্রলার, লঞ্চসহ নানা ধরনের নৌযান চলাচল করত। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এগুলো হারিয়ে গেছে। নদীতে আর পানিই দেখা যায় না, নদীর স্রোত তো দূরের কথা। বর্ষাকালে যতটুকু পানি আসে সেটা অল্প দিনের মধ্যেই শুকিয়ে যায়। বর্তমানে ইছামতী ও হুড়াসাগর নদীতে পানি নেই বললেই চলে। নদীর বুকে জেগে উঠেছে চর। সেখানে ধান, পাট, সরিষা, গমসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হচ্ছে। নদীতে পানি না থাকায় পাড়ের মানুষের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। সেচের জন্য এ দুই নদীর ওপর শতভাগ নির্ভর করতে হয় এলাকার কৃষকদের। বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে পানি সংকটের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, একাধিকবার নদী খননের দাবি জানানো হলেও তেমন কোনো সুফল মেলেনি। কামারখন্দের চর টেংরাইল গ্রামের কৃষক সোবাহান আলী, শফি এবং বেলকুচি উপজেলার সমশপুর গ্রামের অনেক কৃষক বলেন, আমরা মনে প্রাণে চাই নদী বেঁচে থাকুক। নদী আমাদের শুধু মাছই দেয় না, সারা বছর চাষাবাদের কাজে সেচের পাশাপাশি নদীর পানিও ভূমিকা রাখে। বর্ষার সময় নদীর পানি চার দিকে ছড়িয়ে পড়ায় ফসলের জমিতে পলি জমে মাটির উর্বরতা বাড়ায়, এতে ফলন বাড়ে। তাই আমরা উল্লেখিত নদীগুলোর খননের জোর দাবি জানাই। উপজেলার কাজীপুরা গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব আব্বাস বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম এই হুড়াসাগর নদীতে স্রোতধারা দেখেছি, সেখানে অনেকেই স্রোতে ভেসে যেত। স্রোতের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল, নদীতে নামতেই অনেকে ভয় পেয়েছি। অথচ সেই নদী আজ মরা গাঙে পরিণত হয়েছে। এর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা এই হুড়াসাগর নদী খনন করে নদীর স্বাভাবিক জীবন ফেরানোর দাবি জানান। স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন জানান, আমরা আগে ইছামতী ও হুড়াসাগর নদীতে অনেক ধরনের মাছ ধরেছি। সারা বছর নদীতে পানি থাকত। কত বড় বড় নৌকা এই নদী দিয়ে বয়ে চলেছে। কিন্তু এখন আর সেই রূপ চোখে পড়ে না। মরে গেছে নদী। কামারখন্দের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সবুজ বলেন, হুরাসাগর নদীতে সারা বছর পানি থাকত, থাকত মাছ। অতীতের সেই উত্তাল হুড়াসাগর নদী সংস্কারের অভাবে আজ গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মকলেসুর রহমান জানান, ফুলজোড়, ইছামতী ও হুড়াসাগর নদীর মধ্যে ফুলজোড় নদীর কিছু খননকাজ করা হয়েছে। ইছামতী নদীর প্রবেশমুখ কাজীপুর উপজেলায় এরই মধ্যে খননকাজও হয়েছে। উল্লেখিত নদীগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ে খনন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কাজ সমাপ্ত হলে নদীগুলো আগের রূপ ফিরে পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *