বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জ জেলার শহরে বিভিন্ন বহুতল ভবন সহ ছোট-বড় অনেক মার্কেট গড়ে উঠেছে। তবে কোথাও কোনো পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই, মানিকগঞ্জ শহরের যানবাহন যাতায়াতের জন্য রয়েছে এক লেনের একটি সড়ক। পার্কিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানুষজন মোটরসাইকেল কিংবা ছোটখাটো যানবাহন রাখছে এক লেনের রাস্তার পাশে। এর কারনে তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ শহরে শহীদ রফিক সড়কের সংলগ্ন অনেকগুলো বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। যার কোনোটিতে পার্কিং ব্যবস্থা নেই অথচ মানিকগঞ্জ পৌরসভা থেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এইসব ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এইসব ভবনগুলো অনুমোদন দেওয়ার কারণে মানিকগঞ্জবাসী গতকাল সমাধান না পাওয়া দুর্ভোগের শিকার। নিয়ম অনুযায়ী পৌরসভার ভেতর কোনো বহুতল ভবন করলে সেখানে পার্কিং স্পেস করা বাধ্যতামূলক। পার্কিং স্পেস না থাকলে সেই ভবনের কোনো অনুমোদন দেওয়া যাবে না। এরমধ্যে বেশ কিছু ভবনে পার্কিং স্পেস করলেও সেখানে ভাড়া দিয়েছে দোকান কিংবা শোরুম। মানিকগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড এলাকার দোয়েল মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ড যা পারকিং শেষের জন্য বরাদ্দ তাতে করা হয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট। এর বিপরীতে মানিকগঞ্জ পৌর মার্কেট বহু বছর আগে নির্মাণ করা হলেও সেখানে নেই কোনো পার্কিংয়ের জন্য জায়গা যার ফলে মানুষ নিরুপায় হয়ে মোটরসাইকেল কিংবা ছোটখাটো যানবাহন রাখছে ভবনটির পাশে থাকা সরকারি রাস্তাতে। সরকারি রাস্তা তে পার্কিং করার কারণে অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত পার্কিং মামলা দিচ্ছে। একটি দৃশ্য মানিকগঞ্জ কাঁচা বাজারের সামনে সেখানটিতে পার্কিংয়ের জায়গা না থাকার কারণে মানুষ নিরুপায় হয়ে সরকারি রাস্তা তে পার্কিং করছে। যার ফলে চার লেইনের সড়কটির কিছু অংশ দখল হয়ে থাকছে। কাঁচা বাজারের পাশেই রয়েছে কিছু মোটর সাইকেলের পার্টস বিক্রির দোকান। ঠিক তার সামনে সরকারি রাস্তার কিছু অংশে দশটির অধিক মেকানিক এর দোকান যেখানে মানুষ মোটরসাইকেল ঠিক করতে আসে। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই অংশটুকু একটু বেশি দখল হয়ে থাকে যেখানে ট্রেড লাইসেন্সবিহীন চলছে রমরমা বাণিজ্য। দোয়েল মার্কেটের পাশে রয়েছে বৃহত্তর সিএনজি স্ট্যান্ড যা সরকারি রাস্তা তে করা হয়েছে। এখানটিতেও দেখা মিলবে রাস্তার অধিকাংশ জায়গা দখল করে চলছে এই সিএনজি স্ট্যান্ড। মূলত সিএনজি পার্কিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে এখান থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সিএনজি চলে। মানিকগঞ্জ শহরের শহীদ রফিক সড়কের দেখা মেলবে আরো কিছু দৃশ্য। যেখানে পার্কিংয়ের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড থাকলেও সেখানটিতে বাণিজ্যিকভাবে দোকান/শপিং মল ভাড়া দেওয়া হয়েছে। শহরে আফরোজা রমজান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এর বিপরীতে চাঁদনী টাওয়ারে পার্কিংয়ের জায়গায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে চাঁদের হাট নামক একটি শপিংমলকে। তার পাশে থাকা তুফান আলী প্লাজার আন্ডারগ্রাউন্ডে ইসমাইল ক্রাফট নামে একটি শপিংমল ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কালিবাড়ি মন্দিরের পাশে জিতেন্দ্র টাওয়ার সেখানে পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থাই রাখা হয়নি অথচ ভবন ১০ তলার। এছাড়াও শহরের প্রায় প্রত্যেকটি ভবনে গেলে দেখা মিলবে না পার্কিংয়ের কোনো জায়গার। এতে করে সাধারণ মানুষ একপ্রকার বাধ্য হয়ে এক লেনের শহীদ রফিক সড়কে মোটরসাইকেল সহ ছোটখাটো যানবাহন পার্কিং করছে। এতে করে তীব্র থেকে তীব্র যানজট দিন দিন বেড়েই চলেছে। অপরদিকে সাধারণ জনগণ ট্রাফিক পুলিশের অভিযানে মাঝেমধ্যে পার্কিংয়ের জন্য মামলার শিকার হচ্ছে। যানজট নিরশনে একমাত্র সমাধান হচ্ছে পার্কিং ব্যবস্থা ঠিক করা এবং বহুতল ভবন গুলোতে পার্কিং বাধ্যতামূলক করা। সচেতন মহল বলছে, আওয়ামী লীগের সময়ে পৌরসভা কর্তৃক অনিয়ম তান্ত্রিকভাবে লাখ টাকার বিনিময়ে গণহারে হ্যালো বাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যা এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, এত এত হ্যালো ভাই শহরে প্রবেশ করার কারণে যানজট দিন দিন তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। এদিকে সাধারণ জনগণ বলছে, পার্কিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে বাধ্য হয়ে সরকারি রাস্তাতে পার্কিং করতে হয়। এ দায়ভার বিগত সময়ে পৌর কর্তৃপক্ষ যারা বিল্ডিং অনুমোদন দিয়েছে তাদের এবং যারা পার্কিংয়ের জায়গায় শপিংমল ভাড়া দিয়েছে তাদের। তবে এজন্য আমাদের সাধারণ জনগণকে মাঝেমধ্যে পার্কিংয়ের জন্য মামলার শিকার হতে হচ্ছে। অন্যের দোষের শাস্তি আমাদের ভোগ করতে হয়। আহমেদ বাঁধন নামের এক বাইকার বলেন, মানিকগঞ্জ শহরে দিনে দিনে যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও, সেই অনুপাতে পার্কিং সুবিধা বাড়েনি। নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় বাইকাররা বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে কিংবা দোকানের পাশে বাইক রাখতে হয়। ট্রাফিক পুলিশ অনেক সময় পরিস্থিতি বিবেচনা না করে মামলা দিচ্ছে, যা বাইকারদের জন্য বাড়তি ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। জরুরি ভিত্তিতে পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে মানুষ যেমন নিয়ম মানে, তেমনি অযথা শাস্তির শিকার না হয়। শাকিল আহমেদ বলেন, এ দায়ভার বিগত সময়ে পৌর কর্তৃপক্ষ যারা বিল্ডিং অনুমোদন দিয়েছে তাদের এবং যারা পার্কিংয়ের জায়গায় শপিংমল ভাড়া দিয়েছে তাদের। তবে এজন্য আমাদের সাধারণ জনগণকে মাঝেমধ্যে পার্কিংয়ের জন্য মামলার শিকার হতে হচ্ছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক হাসান শিকদার বলেন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হলেও মানিকগঞ্জ শহরকে অপরিকল্পিত শহর বললেও ভুল হবে না। আর এই শহরের বহুতল ভবন গুলো বেশির ভাগগুলোতেই পার্কিং এর ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার আশেপাশে সব সময় মোটরসাইকেল বা যানবাহন গুলো রাখা হয় যার ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। আমরা দেখি বিভিন্ন সময় পুলিশ রাস্তায় পার্কিং করার জন্য যানবাহনে জরিমানা করে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ভবন মালিকরা যে কোন প্রকার পার্কিং ব্যবস্থা না রেখেই ভবন নির্মাণ করছে এর জন্য পৌরসভা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। আমাদের দাবী বহুতল ভবনগুলোর আন্ডারগ্রাউন্ডে পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হোক এবং পরিকল্পিত নগরী নির্মানে পৌরকর্তৃপক্ষ জোরালো ভূমিকা রাখুক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক রমজান মাহমুদ বলেন, এই বহুতল ভবনের মালিক, মার্কেট কর্তৃপক্ষ এবং বিগত সময়ে পৌরসভার মেয়র ও ইঞ্জিনিয়ার এর কারণে পার্কিংয়ের এই দূর অবস্থা। তারা যদি পার্কিংয়ের জায়গা গুলো ঠিকমতো দেখি অনুমোদন দিত তাহলে এই অবস্থা হতো না। উনাদের কারণে সাধারণ মানুষ মামলার শিকার হচ্ছে। এছাড়াও শহরের যানজটের মূল কারণ এটি। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে বর্তমান পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বলবো এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করার জন্য। এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, আমরা ৫ তারিখের পরে আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে একাধিকবার এটা বলেছি। এটা সমাধানের জন্য যেসব বিল্ডিং এ পার্কিং এর ব্যবস্থা নেই তা ভেঙে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং যেগুলোতে থাকা সত্ত্বেও ভাড়া দিয়েছে সেগুলোকে অতিসত্বর বন্ধ করে পার্কিং ব্যবস্থা করা উচিত। মানিকগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় তাদের অভিযান করে সতর্ক করছি কিন্তু মূল সমস্যা পার্কিং ব্যবস্থা নেই কোনো মার্কেটের। পার্কিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে অনেক সময় আইন থাকলেও মানবিক কারণে তা সম্পূর্ণ প্রয়োগ করতে পারিনা। তবে আগের তুলনায় যানজট অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক সানজিদা জেসমিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।