আরিফুর রহমান, মাদারীপুর
আগামী সংসদ সদস্য নির্বাচনে মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি থেকে নমিনেশন পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন একাধিক নেতা। তারা এলাকায় এলাকায় জনসভা, কর্মিসভাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। মাদারীপুরের-১ আসনে একাধিক নেতার নমিনেশন লাড়াইতে বিভক্তি তৈরি হচ্ছে দলের মধ্যে। ঘটছে সংঘষের ঘটনা। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী শিবচর উপজেলা আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেনকে তাদের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই নূর-ই-আলম চৌধুর ওরফে লিটন চৌধুরীর একছত্র নেতৃত্বে ছিল শিবচর উপজেলা। এখানে তার কথাই ছিল শেষ কথা। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে কোন দলই এখানে দাড়াতে পারেনি। ক্ষমতার পালাবদলে বদলে গেছে সেই চিত্র। লিটন চৌধুরী পালাতক। আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। অনেক নেতা কর্মীই গাঁ ঢাকা দিয়েছে। যারা এলাকায় আছে তারা চুপচাপ থাকলেও কেউ কেউ আবার বিএনপি-জামাতসহ রাজনৈতিক দলগুলোতে যোগ দিয়ে নিজেদের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছেন। বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকায় সুবিধা হচ্ছে সুযোগ সন্ধানী তথাকথিত এই সকল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিদের। মাদারীপুর-১ আসন থেকে এবার বিএনপির মনোনায়ন দৌড়ে শিবচর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কামাল জামান নূরুদ্দিন মোল্লা, সাবেক সংসদ সদস্য নাদিরা মিঠু চৌধুরী, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী ও উপজেলার সাবেক সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান এর নাম শোনা যাচ্ছে। শিবচরের এক প্রান্ত থেকে ওপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছে এই নেতারা। জানান দিচ্ছেন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাওয়ার কথা। কেউ কেউ আবার এরই মধ্যে ভোট চাওয়া শুরু করে দিয়েছে। একাধীক নেতা প্রার্থী হতে চাওয়ায় প্রত্যেক নেতা এক একটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই বিভক্ত উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যান্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝেই ছোট বড় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে গ্রুপগুলো। এই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়েত ইসলাম। উপজেলা আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এমনকি গ্রাম পর্যায়ে নেতা কর্মীরা গণসংযোগ শুরু করেছে। এরই মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা সম্পন্ন করেছে তারা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, বিএনপির একাধিক গ্রুপের বিষয়টি মাথায় রেখে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু জনমত তৈরিতে মাঠে নেমেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন মিটিং, সামাজিক অনুষ্ঠান ও গণসংযোগ করছেন তিনি। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাবিলা মিঠু চৌধুরী বলেন, আমি সবসময় বিএনপি রাজনীতিতে মাঠে ছিলাম। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি দলের জন্য। আমার শ্রম ও ত্যাগ দলের নেতা কর্মীরা যেমন জানের তেমনী হাই কামান্ডও জানে। তাই আমি সম্পূর্ণভাবে আশাবাদি আমি নমিনেশন পাব। আমি ছাড়াও আরও কয়েকজন নেতা নমিনেশন নেয়ার চেষ্টা করছে। ফলে বিএনপিতে কয়েকটি গ্রুপ হয়ে গেছে। এটি এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। সর্বশেষ দল যে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবেই আমি কাজ করব। সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী বলেন, শিবচর আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকা। এখানে জামাত বা জাতীয়পার্টির তেমন কোন অবস্থান নেই। আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় সবাই ভাবছে বিএনপি থেকে নমিনেশন পেলে সহজে এমপি হওয়া যাবে। তাই একাধিক মনোনায়ন প্রত্যাশী এখানে। দুর্দিনে বিএনপিতে কাদের অবদান বেশী তা দল বিবেচনা করবে। তাই আশা করছি আমি নমিনেশন পাব। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী শিবচর উপজেলা আমির ও প্রার্থী মাওলানা সরোয়ার হোসেন বলেন, আমরা নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। প্রতিটি ভোট কেন্দ্র ভিক্তিক কমিটি করা হয়ে গেছে। বেশ কিছু এলাকায় সমাবেশ করেছি। এছাড়া হাট বাজারগুলোতে বৈঠক করছি। সমাবেশ ও বৈঠকগুলোতে ৫৩ বছরের ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম থেকে দেশকে বাঁচাতে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীকে একবার সুযোগ দেয়ার আহ্বান করছি। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জাহান বলেন, বিএনপি অনেক বড় একটি দল। সেখানে এক আসন থেকে একাধিক নেতা মনোনায় চাইতে পারে। ফলে একাধিক গ্রুপ তৈরি হতে পারে। এটি দোষের কিছু না। তবে দলের নমিনেশন একজনই পাবে। এখন দেখার বিষয় দল যাকে নমিনেশন দিবে তাকে সবাই সমর্থন করে কিনা। যদি না করে সে বিএনপির শুভাকাঙ্খি হতে পারে না।