মাগুরায় বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারীদের কর্মবিরতি

শেখ ইলিয়াস মিথুন, মাগুরা

বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারীদের ন্যায্য দাবিসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল সোমবার কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মবিরতিতে মাগুরা জেলা জজ আদালতের প্রায় ১৫০ জন কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন। এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীগণকে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, তাদেরকে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতা প্রদানের পাশাপাশি যুগোপযোগী পদ সৃজন, ব্লক পদ বিলুপ্তি এবং যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নই তাদের প্রধান দাবিসমূহ। উক্ত কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন মাগুরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. ফেরদৌস আলম (পরাগ), সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মহিউদ্দীন, জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, উপদেষ্টা সঞ্জয় কুমার রায় ও মো. খাইরুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা শামীমা সুলতানা এবং জেলা সদস্য রেজাউর রহমান। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সায়েদ হাসান টগর। বক্তাগণ বলেন, ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হওয়ার পর বিচারকদের জন্য পৃথক পে-স্কেল এবং নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করা হলেও সহায়ক কর্মচারীদের ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে বিচার বিভাগের অভ্যন্তরে একটি স্থায়ী বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। সহায়ক কর্মচারীরা একই দপ্তরে বিচারকদের সঙ্গে কাজ করলেও তারা জনপ্রশাসনের বেতন কাঠামো অনুসরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা বিচার বিভাগের সার্বিক স্বাধীনতার পথে বড় অন্তরায়। তারা আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালা যুগের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ১৯৮৯ ও ২০০৮ সালের দুটি নিয়োগ বিধিমালা এখনো বহাল রয়েছে, যার ফলে পদোন্নতির সুযোগ সংকুচিত এবং অনেক কর্মচারী দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর একই পদে থেকে অবসরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও প্রধান বিচারপতির আশ্বাস সত্ত্বেও এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকায় কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বক্তাগণ বলেন, সহায়ক কর্মচারীরাও বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যারা বিচারপ্রার্থী জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। অথচ তারা ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তাগণ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, অদ্যকার কর্মবিরতির কর্মসূচি পালনের পরও দুই দফা দাবি মানা না হলে পরবর্তীতে নতুন কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে। সেই সাথে কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকল আইনজীবী, সাংবাদিক ও জনসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়। এভাবেই বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারীদের ন্যায্য দাবিগুলো নতুনভাবে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে, যা একটি বৈষম্যহীন ও কর্মবান্ধব বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *