মোহাম্মদ আলী, ভোলা
ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণসহ পাঁচ দফা দাবির প্রেক্ষিতে ঘোষিত ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার প্রতিবাদে উপকূলের হাজারো মানুষ আজ রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগে বুধবার (১২ নভেম্বর) সকাল ৮টায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা চত্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে লংমার্চ দল।
লংমার্চের শুরু থেকেই সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ব্যানার–ফেস্টুন হাতে এতে অংশ নেন। নৌযানের সংকট থাকা সত্ত্বেও তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশনসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা আন্দোলনকারীরা দলবদ্ধভাবে নদীতে নেমে সাঁতার কেটে অপর প্রান্তে পৌঁছে লংমার্চে যোগ দেন। নদী পাড়ে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে আবেগাপ্লুত হন। অনেকের ভাষ্যে, “এ দৃশ্য উপকূলের বঞ্চিত মানুষের নীরব প্রতিবাদের প্রতীক।”
ভোলার মানুষের ৫টি প্রধান দাবি
১. ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণ।
২. ভোলায় একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা।
৩. ভোলায় একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।
৪. ভোলার গ্যাস ভোলাতেই ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৫. যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জনকল্যাণে আধুনিক সুবিধা নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ।
আন্দোলনকারীরা বলেন, “হয় আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেন— নয়তো ভোলার গ্যাস নেওয়া বন্ধ করুন।” তাদের দাবি, উপকূলের মানুষের প্রতিটি চাওয়া জীবন–জীবিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। দীর্ঘ অবহেলার জেরে জনগণের ক্ষোভ আজ চরমে পৌঁছেছে। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেন তারা।
চরফ্যাশন থেকে যাত্রা শুরু করা লংমার্চ দল বরিশাল, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও মানিকগঞ্জ অতিক্রম করে আগামী সপ্তাহে ঢাকার সেতু ভবনে পৌঁছাবে। সেখানে অনুষ্ঠিত হবে চূড়ান্ত সমাবেশ। ওই সমাবেশে পাঁচ দফা দাবিপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকলেও লংমার্চের মূল দল ঢাকার দিকে অগ্রসরহন ।
স্থানীয়দের মতে, ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণ হলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এতে কর্মসংস্থানের নতুন পথ তৈরি হবে, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ কমবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে। একই সঙ্গে মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ ভোলার উন্নয়নকে এগিয়ে নেবে বলে আশা করছেন তারা। পুরো কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে প্রশাসন জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা সম্পূর্ণ অহিংস ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। জনদুর্ভোগ কমাতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তাও তারা পাচ্ছেন বলে জানান অংশগ্রহণকারীরা। উপকূলের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, উন্নয়ন বৈষম্য ও ন্যায্য দাবির পক্ষে এক অনন্য গণ-সমাবেশে পরিণত হয়েছে এই লংমার্চ ও শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচি। পাঁচ দফা দাবি পূরণের লক্ষ্যে উপকূলবাসীর এই গণআন্দোলন দেশের উন্নয়ন কাঠামোতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
