ePaper

বর্ষাকালে খালে নেই পানি, পাট পচানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকৃতির নিয়মে বর্ষা এলেও এ বছর উত্তরাঞ্চলের জেলায় ভিন্ন এক চিত্র। মৌসুম শুরু হলেও নদ-নদীর পানি এখনো খাল-বিল ছুঁয়ে ওঠেনি। স্বাভাবিক জলাবদ্ধতা না থাকায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন পাটচাষিরা। পাট জাগ দেওয়ার মতো স্বচ্ছ ও পর্যাপ্ত পানির অভাবে বাধ্য হয়ে তারা চড়া দামে পুকুর ভাড়া নিচ্ছেন। জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছর জেলায় ৩ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। উৎপাদন ভাল হলেও পানি-সংকটের কারণে এখন চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। পুকুর ভাড়ায় ২-৩ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে, যা উৎপাদন ব্যয় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সদর, আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জের কৃষকরা জানাচ্ছেন, খরার কারণে খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। কেউ কেউ দূরবর্তী বিলে পাট জাগ দিচ্ছেন, কেউ আবার পুকুরের অস্বচ্ছ পানিতে আঁশ পচাচ্ছেন, এতে মান ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কৃষক আকবর আলী জানান, ‘পুকুরের পানিতে পাট পচালে আঁশের মান কমে যায়। ভালো মানের আঁশ পেতে হলে দরকার স্বচ্ছ প্রাকৃতিক পানির।’ চাষি আমিনুল হোসেন, আলী মিয়া ও কামরুল ইসলাম জানান, বিঘাপ্রতি সার, বীজ, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ প্রায় ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ পড়ে। এখন আবার পাট জাগ দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে, যা তাদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক চাপ।পুকুর মালিকদের দাবি, তারা নিজ খরচে ডিজেলচালিত সেচপাম্প দিয়ে পানি ধরে রাখছেন। ফলে পুকুর ভাড়া তুলনামূলক বেশি। একেকটি পুকুরে গড়ে ৫-৭আটি পাট জাগ দেওয়া হচ্ছে।এই সংকট মোকাবেলায় কৃষি বিভাগ ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতির ওপর জোর দিচ্ছে। জেলা সদরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে কম পানিতে পাট পচানো সম্ভব। এতে আঁশের গুণগত মান বজায় থাকে, সময় ও শ্রমও বাঁচে।’জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, ‘বর্ষা হলেও বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কম। তাই খাল-বিল শুকনো। এই পরিস্থিতিতে রিবন রেটিং পদ্ধতি হতে পারে কার্যকর সমাধান।’তবে শুধু পাট নয়, পানির অভাবে ধানের বীজতলা তৈরিসহ অন্যান্য মৌসুমি কৃষিকাজও ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই বর্ষার চেনা চিত্র পাল্টে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *