ফরিদপুরের সালথায় পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপির তাণ্ডব/প্রায় অর্ধশত বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর আহত-২৫

ব্যুরো চিফ, বৃহত্তর ফরিদপুর

ফরিদপুরের সালথায় পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে বিএনপি দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা। তাদের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ব্যাপক ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিশু, নারীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। শুক্রবার রাতে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গারদিয়া পশ্চিমপাড়ার মৃত তফছার মোল্যার দুই সন্তানের অনুসারীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। স্বরেজমিনে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাঙ্গারদিয়া পশ্চিমপাড়ার ফারুক মোল্যা ও উজ্জ্বল মোল্যা পরস্পর সহোদর। তাদের মধ্যে ফারুক স্থানীয় জালাল মাতুব্বরের সমর্থক, আর উজ্জ্বল ইউপি সদস্য নান্নু মাতুব্বরের সমর্থক। ফারুকের ছেলের আকিকার মাংস ছোট ভাই উজ্জ্বলের বাড়িতে পাঠালে তিনি তা গ্রহণ করেননি। তার বড় ভাই বিএনপির অপর পক্ষের অনুসারী হওয়ায় সেই মাংস ফেরত দেন। এতে অপমাণিত বোধ করে উজ্জ্বলকে শাসাতে গেলে তার সঙ্গে ফারুকের হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে শুক্রবার সন্ধ্যার পর রাঙ্গারদিয়া খালপাড়ার আজিজুর মোল্যা ও মিরাজ মোল্যাকে মারধর করে নান্নুর অনুসারীরা। এই ঘটনার জেরে শনিবার উভয় পক্ষ ঢাল, সুড়কিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পাল্টাপাল্টি নান্নু ও আজিজুর এবং তাদের সমর্থকদের বাড়ি ঘরেও হামলা হয়। ভাঙচুর লুটপাট শেষে স্থাপনাগুলোতে অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারীরা। দুদিনের সংঘর্ষ ও হামলায় অর্ধশতাধিক বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছে ২৫ জন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং কয়েকজনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, নান্নু সোনাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুন্নু শেখ ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি মারা যাওয়ায় এই পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুন্নুর ভাতিজা অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেন জয়নাল মোল্যা। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাওলানা আজিজুল হক। আজিজুল হক বলেন, ‘নান্নু এক সময় আওয়ামী লীগ করতেন, বর্তমানে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে বিশৃঙ্খলা করছেন। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক ভাড়া করে এনে আমার সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন। তারা ১৫টি গরু লুট করেছেন, এর মধ্যে দুটি ফেরত দিয়েছেন। এছাড়া নগদ টাকা ও দামী জিনিসপত্র চুরি করেছেন তারা। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’ অধ্যাপক শাখাওয়াত বলেন, ‘আমি ঢাকায় ছিলাম, সংঘর্ষ হয়েছে আমার বাড়ি থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে অন্য একটি গ্রামে। কিছু লোক সংঘর্ষ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি এর নিন্দা জানাই।’ সালথা থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, রাঙ্গারদিয়া গ্রামে আকিকার মাংস নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে হাতাহাতির জেরে বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। খবর পেয়ে রাঙ্গারদিয়া গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *