সুমন মিয়া (গাইবান্ধা) সুন্দরগঞ্জ
সমাজে প্রতিনিয়ত আস্থার সংকট বাড়ছে। মানুষ কথা দিচ্ছে, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কিন্তু তা রক্ষা করছে না। এর ফলেই তৈরি হচ্ছে অবিশ্বাস, হতাশা এবং সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভর করে তার কথার মূল্যায়ন করার সক্ষমতার উপর। তিনি যদি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেন, তবে সমাজে তার মর্যাদা এবং গ্রহণযোগ্যতা অটুট থাকে। অন্যথায়, সাধারণ মানুষ তাকে প্রতারক বা ‘চিটিংবাজ’ বলতেই দ্বিধা করে না। বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনই তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শিকার হচ্ছেনÑকেউ কথায় কথা দিয়ে সাহায্য না করে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, কেউ আবার আর্থিক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে দিচ্ছে চরম ভোগান্তি। এমন পরিস্থিতিতে আস্থা গড়া যেন এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন শিক্ষক বলেন, “আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শেখাই, কিন্তু সমাজে যখন বড়রা কথার দাম দেয় না, তখন শিশুরাও শেখে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভাঙা যায়। এটা খুবই ভয়ংকর একটা বার্তা।”
একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, “বড় বড় লোকেরা কাজ দিবে বলে কথা দিয়ে আর খোঁজই নেয় না। এরপর আমাদেরই প্রতারক বলা হয়। আমরা তাহলে যাব কোথায়?” এই বাস্তবতায় সমাজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিশ্রুতি দেয়ার আগে আত্মমূল্যায়ন করা খুব জরুরি। আপনি যা বলছেন, তা রক্ষা করতে পারবেন তো? যদি না পারেন, তাহলে বলা থেকেই বিরত থাকাই শ্রেয়। ইসলামে বলা হয়েছে, “মুমিন তার কথা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।” অন্য ধর্মগুলোতেও কথা রক্ষা করাকে মহান গুণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই বিশ্বাস গড়তে হলে, প্রথমে নিজের কথার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। মানুষের মুখের কথা একটি দায়িত্ব, একটি চুক্তি। তাই মুখ খুলে প্রতিশ্রুতি দেয়ার আগে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখে ভাবুনÑআমি কি পারবো তা রক্ষা করতে? যদি পারেন, বলুন। যদি না পারেন, চুপ থাকুন। কারণ মানুষের বিশ্বাস একবার ভাঙলে তা আর জোড়া লাগে না। একটি সমাজ তখনই সুন্দর হয়, যখন মানুষ একে অপরের উপর আস্থা রাখতে পারে। আর এই আস্থা গড়ে ওঠে প্রতিশ্রুতি ও কর্মের মাধ্যমে। তাই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ নয়, আস্থা গড়াই হোক জীবনের লক্ষ্যÑএই মূল্যবোধেই আমাদের পথ চলা হোক।
