ePaper

‘পাগল হলেও তো ও আমার স্ত্রী, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আগলে রাখতে চাই’

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘প্রায় ছয়-সাত বছর আগে সুফিয়া মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তাই ওর সব খেয়াল আমাকেই রাখতে হয়। সারাদিন মনে হয়, কোথাও যদি একা একা গিয়ে হারিয়ে যায়। তাই যতটুকু সম্ভব দেখে রাখি। সারাদিন এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করলেও রাতে ঘরে ফিরে আসে। তা ছাড়া আমাদের রান্না করে দেওয়ার মতো কেউ নাই। আমিও রান্না করতে পারি না। তাই তিন বেলা হোটেল থেকে কিনে এনে নিজ হাতে ওকে খাইয়ে দিই। পাগল হলেও তো ও (সুফিয়া) আমার স্ত্রী। তাই ওর দিকে খেয়াল রাখি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবেই ওকে আগলে রাখতে চাই।’এভাবেই মানসিক প্রতিবন্ধী স্ত্রী সুফিয়া বেগমের (৫৫) প্রতি নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেন মাদারীপুর পুরান বাজারের ভ্রাম্যমাণ পান ও সিগারেট বিক্রেতা বৃদ্ধ মানিক শিকদার (৭০)। তিনি মাদারীপুর শহরের পুরানবাজারের কাজীর মোড় এলাকার মৃত জব্বার শিকদারের ছেলে।স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪০ বছর আগে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দার রাজা মজুমদারের মেয়ে সুফিয়া বেগমকে বিয়ে করেন মানিক। বিয়ের পর তাদের পাঁচ সন্তানের জন্ম হয়। বড় ছেলে সবুজ শিকদার (৩৫) কিছুই করেন না। তিনি অসুস্থ ও মানসিক রোগী। তাই বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চেয়ে কোনোরকম দিন কাটান। মেঝ ছেলে মিলন শিকদার (৩২) দুই বছর আগে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন। ছোট ছেলে সুজন শিকদার (২৮) খাবারের হোটেলে কাজ করেন। দুই মেয়ে মুন্নি ও পান্নাকে বিয়ে দেন। তারা তাদের শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। দুই ছেলে আলাদা থাকেন। তাই এই বৃদ্ধ বয়সে মানিক শিকদার পুরানবাজারে ভ্রাম্যমাণ দোকানে পান ও সিগারেট বিক্রি করেন। যা টাকা পান তা দিয়ে কোনোভাবে দুইজনের সংসার চলে। প্রতিবেশী সোহাগ হাসান বলেন, মানিক শিকদারের স্ত্রীর মানসিক সমস্যা আছে। সারাদিন রাস্তায় থাকেন। তবুও মানিক তার স্ত্রীকে ভালোবেসে যত্ন নেন। নিজ হাতেই খাইয়ে দেন। এমন ভালোবাসা আজকাল তেমন একটা চোখে পরে না। ফারজানা আক্তার মুন্নি বলেন, অনেক পরিবারে দেখেছি, কারো মানসিক সমস্যা থাকে তাহলে আস্তে আস্তে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে জীবন কাটান। সেখানে মানিক শিকদার ভালোবেসে তার স্ত্রীকে দেখাশুনা করছেন। এমন ঘটনা খুব কমই চোখে পড়ে। মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, মানিকের স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা বিরল। কারণ বর্তমান যুগে সবাই নিজের স্বার্থই আগে বোঝে। যেখানে স্ত্রী পাগল হলেও মানিক খুব সুন্দরভাবে আগলে রেখেছেন। মাদারীপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আফজাল হোসাইন বলেন, ব্যক্তিগতভাবে মানিককে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তিনি নিজে বৃদ্ধ হয়েও মানসিক প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে ছেড়ে যায়নি। এমন ভালোবাসা সমাজের উদাহরণ। তার স্ত্রী যদি প্রতিবন্ধী ভাতা না পান, তাহলে সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *