ইয়াকুব নবী ইমন, নোয়াখালী
স্বচ্ছতা ও জন-অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়নের রূপরেখা তৈরির লক্ষ্যে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের উন্মুক্ত বাজেট অধিবেশনের আয়োজন করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পার্টিসিপাটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক-প্রান। গতকাল মঙ্গলবার সুবর্ণচর উপজেলার ৮ নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাবেয়া আফসার সায়মা। অধিবেশনের সভাপতিত্বে ছিলেন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। সচিব গোলাম কিবরিয়ার সঞ্চালনয় এ সময় উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্ধ ও নানা শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনে সচিব গোলাম কিবরিয়া চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) ৫ কোটি ১ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ টাকার বাজেট ও আসন্ন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত ৫ কোটি ৬৮ লাখ ১২ হাজার ২০০ টাকার বাজেট উন্মোচন করেন। তিনি বলেন, “কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেচ, রাস্তা মেরামত ও খাল সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে সুষম বন্টন নিশ্চিত করতে হবে।” ইউনিয়নে মোট ৪৮টি বাজার থাকলেও বাজেট ঘাটতির কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে বলে জানান উপস্থিত বক্তারা। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় উন্নয়নের গতিকে ব্যাহত করছে বলে উল্লেখ করেন তারা। প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাবেয়া আফসার সায়মা বলেন, “রিলিফ সাময়িক সহায়তা হলেও টেকসই উন্নয়ন ভবিষ্যতের জন্য স্থায়ী সুফল বয়ে আনে না। আগামী বাজেটে খাল খনন, কালভার্ট নির্মাণ ও রাস্তা সংস্কারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।” তিনি সুবর্ণচরের আক্তার মিয়ার হাট, চৌরাস্তা থেকে মেইন রোড, বোরহান মার্কেট ও বেড়িবাঁধ এলাকার রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন। প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা চাইবো বাজেট যেন সব এলাকায় সমানভাবে বন্টিত হয়। জলাবদ্ধতা, খাল খনন ও নিরাপদ পানির সংকট সমাধানে পরবর্তী বাজেটে বরাদ্দ প্রয়োজন।” ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. বাহার বলেন, “বর্ষায় জলাবদ্ধতা আর শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকটÑদুই সময়েই ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই নতুন বাজেটে খাল খনন ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থায় অগ্রাধিকার দিতে হবে।” স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মহিবুল্লাহ বাবু বলেন, “জনগণের অংশগ্রহণে বাজেট চূড়ান্ত করা গেলে প্রকৃত প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ নির্ধারণ সহজ হবে।” উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মো. সাহাদাৎ হোসেন বলেন, “মোহাম্মদপুরের নয়টি খাল অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে। এগুলো পুনরুদ্ধার না করলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে। কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট প্রস্তুত করতে হবে।” বিশিষ্ট সমাজসেবক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, “মেঘনা খালের সংস্কার এখন জাতীয় দাবি। পানির অভাবে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত খাল সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।” অধিবেশনে বক্তারা আরও বলেন, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও শিক্ষা খাতে ভাতা বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সভা শেষে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
