হেলাল উদ্দিন নবীনগর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরীকে বদলিকৃত পদায়নের মাধ্যমে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর এই পদোন্নতির খবরে নবীনগরের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আনন্দের পাশাপাশি কৃতজ্ঞতার আবেগ ছড়িয়ে পড়েছে। দায়িত্বকালীন ১৩ মাসে তিনি যে দক্ষতা, আন্তরিকতা ও উদ্ভাবনী নেতৃত্বের পরিচয় রেখে গেছেন, তা নবীনগরের প্রশাসনিক কার্যক্রমে সৃষ্টি করেছে নতুন দৃষ্টান্ত।গত বছরের ২৪ অক্টোবর নবীনগরে যোগদানের পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীল সময়েও প্রশাসনিক দায়িত্বকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। জনগণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি নিরসনে এগিয়ে আসেন সরাসরি মাঠে নেমে। সিন্ডিকেট ভেঙে আলীয়াবাদ–কাউতলী রুটে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া কমাতে গণশুনানি আয়োজন করেন এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় চালু করেন ন্যায্য ভাড়ার বাস সার্ভিস। এতে ওই রুটের কয়েক বছরের জনদুর্ভোগে আসে স্বস্তি।দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র সাত দিনের মাথায় বন্ধ থাকা আশুগঞ্জ–নবীনগর সড়কের উন্নয়নকাজ পুনরায় শুরু করাতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন তিনি। বুয়েটের প্রকৌশলী হিসেবে নিজের পেশাগত সম্পর্ক এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সক্রিয় করে দ্রুত নির্মাণকাজ চালুর ব্যবস্থা করেন—যা স্থানীয়দের কাছে প্রশংসিত হয়। পৌরসভার প্রশাসক হিসেবেও তিনি দেখান কার্যকর নেতৃত্ব। পৌর এলাকায় যানজট নিরসনে নিয়োগ দেন ইউনিফর্মধারী ২০ জন ভিডিপি সদস্য। কলেজ রোডের চলমান কাজকে ত্বরান্বিত করে তিনি যানজট মোকাবিলায় তৈরি করেন দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। নবীনগরের বুড়ি নদীর তীরে জমে থাকা বছরের পর বছরের আবর্জনা অপসারণ, ডাম্পিং স্পটে বর্জ্য স্থানান্তর, নদীপাড়ে ডাস্টবিন স্থাপন, সচেতনতামূলক ব্যানার টানানো এবং পুরো নদীপাড়কে ২০টি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা—এসব উদ্যোগের ফলে নদী ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছে তার আগের স্বাভাবিক সৌন্দর্য। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়ও ছিল উন্নয়নমুখী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় পুনঃনিয়োজিত করতে গঠন করা হবে মেধা বিকাশ পরিষদ, মাধ্যমিক থেকে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ভূমি বিষয়ে বেসিক কোর্স, এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে সব মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠা করা হবে আরবি ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব—যার কার্যক্রম ইতোমধ্যে তিনটি মাদ্রাসায় শুরু হয়েছে। মোট ১৩ মাসের দায়িত্বকাল বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়—তিনি রুটিন প্রশাসনিক কাজের বাইরে গিয়ে উদ্ভাবনী চিন্তা, কমিউনিটি এনগেজমেন্ট এবং মানবিক নেতৃত্বের মাধ্যমে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শক্তির বদলে অংশগ্রহণমূলক প্রশাসনের মডেল বাস্তবায়ন করেছেন নিজের কর্মপ্রচেষ্টায়। নবীনগরের মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ এই ইউএনও’র পদোন্নতি তাঁর যোগ্যতার স্বীকৃতি—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা। তাঁকে নতুন দায়িত্বে আরও সফলতা কামনা করেছেন সকল শ্রেণিপেশার মানুষ।
