ePaper

ডিজিএফআই পরিচয় দেওয়া ৯ অপহরণকারী আটক যুবক উদ্ধার

নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী শহিদুল ইসলাম মালু মিয়ার নিজ বাড়ি থেকে পুলিশের উপস্থিতিতেই ১১ জনের একটি দুর্বৃত্ত দল নিজেদের ‘ডিজিএফআই’র সদস্য পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায় তার ছেলে রিফাত (১৯) কে। দাবি করে মুক্তিপণ ৩ কোটি টাকা। ঘটনার একদিন পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে রিফাতকে কসবা থেকে উদ্ধার করেছে এবং ডিজিএফআই পরিচয় দেওয়া ক্যাপ্টেন রেজাউল করিম রেজাসহ ৯ জনকে আটক করেছে। এই মিশনে ড্রাইভারসহ ১২জন ছিলো, এদের মাঝে কয়েকজন ডিজিএফআইয়ের ও বিমান বাহিনীর সদস্য রয়েছে, আটক হওয়ার পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন রেজা। জানা যায়, ৭ এপ্রিল (সোমবার) রাতে লাউর ফতেহপুর গ্রামে শহিদুল ইসলাম মালু মিয়ার বাড়িতে একটি হাইএক্স গাড়িতে করে আসা ১০-১২ জনের একটি দল দেয়াল টপকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে তল্লাশি শুরু করে। পরে বিষয়টি নবীনগর থানার পুলিশকে অবগত করা হলে পুলিশ এসে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের ডিজিএফআইয়ের সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে তাদের কাজে বাঁধা না দেওয়ার জন্য পুলিশকে হুমকি দমকি দেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য উপস্থিত পুলিশের কর্মকর্তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন এবং অপহরণকারীরাও ফোনে কথা বলে নিজেদেরকে ডিজিএফআইয়ের সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে রিফাতকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এসময় ওই গাড়ির নাম্বার ভিডিও ধারণ ও ড্রাইভারের ফোন নাম্বার রেখে দেয় পুলিশ। পরে অপহরণকারীরা রাত ৩ টার দিকে রিফাতের পিতা মালু মিয়ার কাছে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে, পরদিন ৮ এপ্রিল সকালে রিফাতের মায়ের ফোনে আবার কল দিয়ে মুক্তিপণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা দাবি করে। মুক্তিপণ দাবি এবং নবীনগরে ডিজিএফআইয়ের কোন দল অভিযান পরিচালনা করেনি, এই তথ্য পাওয়ার পরপরই সক্রিয় হয়ে উঠে আইনশৃংখলা বাহিনী। দিনভর অভিযান চালিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কসবা রেললাইনের পাশে সীমান্ত লাগোয়া স্থান থেকে রিফাতকে উদ্ধার ও ক্যাপ্টেন পরিচয় দেওয়া রেজাউল করিম রেজাকে আটক করা হয় এবং গাড়ির নাম্বার ও ড্রাইভারের ফোন নাম্বারের সূত্রধরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অপহরণের সাথে জড়িত থাকা ৮ জনকে খুলনা থেকে আটক করা হয়। মঙ্গলবার রাত ১ টায় কসবা থেকে নবীনগর থানায় আসার পর রিফাত জানান, মঙ্গলবার দিনভর কসবা রেললাইনের পাশে সীমান্তের কাছাকাছি মাইক্রোবাসে আমাকে বসিয়ে রাখা হয়। আমি তাদের সাথে চুক্তি করি, আমাকে ছেড়ে দিলে ৩ কোটি টাকা এনে দিবে। চুক্তি মোতাবেক দুই ধাপে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়, তারা বাকি টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে একটি অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। ওই অ্যাকাউন্ট নাম্বার আমার পরিবারের কাছে পাঠালে, অ্যাকাউন্ট নাম্বারের সূত্রধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে উদ্ধার ও রেজাকে আটক করে। অপহরণকারীরা তল্লাশির নামে আলমারি তালা খুলে নগদ ২ লাখ টাকা ও ২৬ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন মালু মিয়ার স্ত্রী। এ ঘটনায় শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে নবীনগর থানায় নিজ এলাকার মো. কামাল মিয়া, আবু কালাম আজাদ, কামাল খন্দকারসহ অজ্ঞাত আরো ১৫ জনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে নবীনগর থানার সেকেন্ড অফিসার ও দায়িত্বরত ইনচার্জ আবদুল মোনাফ বলেন, অপহরণকৃত যুবককে উদ্ধার এবং ক্যাপটেন পরিচয় দেওয়া রেজাকে কসবা থেকে এবং আরও ৮ জনকে খুলনা থেকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে নবীনগর আনতে রাতেই পুলিশ খুলনা রওনা দিয়েছে। আটককৃত রেজা, কসবা পৌর সদরের মৃত মিলন মিয়ার ছেলে, সে বিমান বাহিনীর সাবেক লিডিং এয়ারক্রাফটম্যান হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চাকরি করছে। বাকি ৮ জনের নাম পরিচয় নবীনগর থানায় আনারপর জানা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *