মো. শামীম হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিঃ-
গাজীপুরে জুলাই আন্দোলনে একটি হত্যা মামলায় নিরপরাদ মানুষদের আসামী বানিয়ে চিহ্নিত যুবলীগদের সহযোগীতায় মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে। এঘটনায় ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত জুলাই যোদ্ধা শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন সাদিক। এছাড়াও মঙ্গলবার সকালে টঙ্গীতে একটি সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছেন সাদিক। সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন সাদিক বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই উত্তরা ৭ নং সেক্টর আধুনিক হাসপাতালের সামনের গলিতে শহীদ রেদওয়ান শরীফ রিয়াদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার কোলে শহীদ হয়। ঐদিন রিয়াদের রক্তে আমার পুরো শরীর ভিজে গিয়েছিল এবং রক্তে ভিজে থাকা পোশাক পরে প্রায় ছয় ঘন্টা আমি অতিবাহিত করি। এরপর দিন ২০ জুলাই হত্যার উদ্দেশ্যে আমার মাথার বাম পাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীরা। এরপর ৫ ই আগস্টের স্বৈরাচারীর পতনের পর থেকে আমার জীবনযাপনটা অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে, নিজের চোখে দেখা জুলাইয়ের প্রত্যেকটি নির্মম ঘটনা বারবার মনে পড়ে। সেই অনুভূতিগুলই আমার স্বাভাবিক জীবনযাপন কে বাধাগ্রস্থ করে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমার পড়ালেখা। এমনকি আমি আমার নিজের জীবনের স্বপ্ন পূরণের কথা ভুলে গিয়ে, শুধুমাত্র জুলাইয়ের স্মৃতি এবং অর্জনের পরে ভিত্তি করে চলতে থাকে প্রতিটি দিন। জুলাইয়ের এই নির্মম ঘটনাগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে ন্যূনতম হলেও কোন শাস্তির ব্যবস্থাটুকু না করে সাধারণ জীবনযাপনে ফিরে যাওয়াটা জীবনটাকে হুমকির মুখে ফেলে দিবে। আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল জুলাইয়ে যে সকল সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিল তাদের শাস্তির জন্য একটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবো। সেই উদ্দেশ্যে আমি সাংগঠনিক কাউকে কিছু না জানিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ৫২ জন সন্ত্রাসীকে সনাক্ত করি। যারা জুলাই অভূত্থানে সরাসরি আমার দেখা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল। এই ৫২ জনকে আসামি করে একটা মামলা করার উদ্দেশ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানার ওসি আলি মোহাম্মদ রাশেদের কাছে যাই। আমি নিজে বাদী হয়ে ২৫(৪) ২০২৫ নং মামলাটি ৫২ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গাছার ওসি এবং যুবলীগ কর্মীদের চক্রান্তকরে মামলাটি নিজেদেরমত করে সাজিয়ে আমাকে জিম্মি করে ১১৮ জনকে আসামি করেছে। যাদের মধ্যে প্রায় ৯০ জন আসামিকেই আমি চিনিনা। আমি যে ৫২ জন আসামিদের নামে মামলা করতে চেয়েছিলাম তাদের অনেকের কাছ থেকেই মোটা অংকের টাকা নিয়ে মামলা থেকে বাদ দেয় ওসি। যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে অনেক সাধারন নিরপরাধ নির্দোষ মানুষকে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক দ্বন্দ্বের যের ধরে তারা আসামি করেছে। ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ এবং ওই যুবলীগের কর্মীরা আমার বিভিন্ন রকম ক্ষতি করার জন্য নানান ধরনের ষড়যন্ত্র করতে। এমনকি ফোন কল করে আমাকে হত্যা হুমকি দিতেছে। আমাকে ফোন করে জানতে চাওয়া হচ্ছে কত টাকার বিনিময়ে আমি চুপ হয়ে যাব। এসবের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে স্বৈরাচারীর দোসর গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ। এসব ঘটনা আমি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতল কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এছাড়া আমি নিজে বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর একটা অভিযোগ দায়ের করেছি। ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ প্রত্যেকটা ব্যাপারেই অনিয়ম এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত। আমার সাথেও সে একই আচরণ করার পরে আমি ব্যক্তিগতভাবে রিচার্জ করেছি এবং দুই তিনটা স্পষ্ট প্রমাণসহ তার অপকর্মের রেকর্ড পেয়েছি। আসামি বাণিজ্যের বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই মামলা যাদের আসামি করা হয়েছে তা বাদির সম্মতিতেই করা হয়। মামলার কপিতে যাতে আসামী করা হয়েছে তাদের নাম ঠিকানা দেখেই তিনি মামলায় স্বাক্ষর করেছেন। আমি আসামীদের কাউকে চিনি না। এখন তিনি যে অভিযোগ করছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।