মিলন পাটোয়ারী, জলঢাকা
নীলফামারী জলঢাকায় উপজেলার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বালাপাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রুপিং, প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের মনোমালিন্য, ও দায়িত্বহীনতা শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের অসদাচরণ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল বিমুখ হওয়াসহ নানাবিধ কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বেহাল অবস্থা। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী গণমাধ্যমে কে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ের কারণে মনোমালিন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য স্যারেরা নিয়মিত ক্লাশ করান না। ৪/৫ জন স্যার বলেন, ক্লাশ হবে না চলে যাও আবার কোন স্যার বলেন, ক্লাশ ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছেন কেন ৮ম শ্রেণীর এক ছাত্রী বলেন, কোন কারণে স্কুল ড্রেস পরে না আসলে স্যাররা বংশ ও পিতামাতা তুলে অসদাচরণ করেন। যা অপমানজনক বিষয়। প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক আব্দুস সালাম, অসীম অধিকারী ও প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, আগে স্কুলটি ছাত্রছাত্রী দিয়ে ভরপুর ছিল। কিন্তূ বর্তমান এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির যে অবস্থায় তাতে ধ্বংস হতে বেশি দিন সময় লাগবে না। অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষককে সহকারী ৪ থেকে ৫জন শিক্ষক তাকে মানছেন না। তারা গোপন যোগসাজশে প্রতিনিয়ত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতি করার পাঁয়তারা করছে। অভিভাবকদের অভিযোগ বিদ্যালয় শিক্ষকদের অভ্যান্তরিন কোন্দলের কারণে আমাদের এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পরবে কেন একটি পক্ষ প্রতিষ্ঠান মোক্ষম ভুমিকা রাখছে আর একটি পক্ষ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। স্কুল নিয়ে ষড়যন্ত্র করবে আবার সরকারি বেতনো খাবে এটা হতে পারে না। আমরা অভিভাবকরা স্থানীয় প্রশাসন সহ শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের নিকট আবেদন করবো যে, শিক্ষকদের অভ্যান্তরিন কোন্দলের স্বীকার হয়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যেন বেহাল অবস্থা না হয়। বিদ্যালয়টিতে ১০ম শ্রেণীর পি- টেস্ট পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিক্ষার প্রথম দিন অংশগ্রহণ করেছিলেন ৩৪ জন। দ্বিতীয় দিন পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১৮ জন। তৃতীয় দিন পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১০জন এবং গতকাল ৪ঠা আগষ্ট বৃহস্পতিবার পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন মাত্র ৩জন। শিক্ষার্থী কমিয়ে আশার কারণ শিক্ষার্থী জানান, প্রথম পরিক্ষার পর সহকারী শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র রায় ও নাজমুল ইসলাম স্যার বলেছেন এ পরিক্ষায় কোন বাধ্যবাধগতা নেই। দিলেও হবে আর না দিলেও চলবে। এমন কথা শুনে পরিক্ষার্থী ছাত্র ছাত্রীরা পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করছে না। এ জন্য আজ শুধু আমরা ৩জন শিক্ষার্থী পরিক্ষা দিচ্ছি। ৬ষ্ট থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এবং অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমান প্রধান শিক্ষককে মানতে নারাজ প্রতিষ্ঠানটির কয়কেজন সহকারী শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক নিয়ম তান্ত্রিক স্কুল পরিচালনা করতে চাইলেও স্কুলের ৪/৫জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উল্টো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। বালাপাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৮৭ সালে। এমপিও ভুক্ত হয় ১৯৯৪ সালে। বর্তমান এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির রেজিষ্ট্রার খাতায় সাড়ে ৩শত জন শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত থাকলেও ৬ষ্ট শ্রেনী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত উপস্থিতির সংখ্যা মাত্র হাতেগুনা ৩০ থেকে ৪০ জনের মত। শিক্ষক ১১ জন থাকলেও উপস্থিতি অতি নগন্য বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পিয়ন, আয়েয়া ও নৈশ্য প্রহরী নিয়োগপ্রাপ্ত নেই। অন্যদিকে উপরোক্ত বিষয়াদি নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক নাজমুল ও প্রতাপকে মোবাইলে যোগাযোগ করলে গণমাধ্যম পরিচয় পেয়েই ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন। এ জন্য তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বালাপাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু অনাথ চন্দ্র রায়, দৈনিক নব চেতনা কে জানান, স্কুলের ৪/৫ জন সহকারী শিক্ষক কর্মরত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অমনোযোগী। তারা সঠিক দ্বায়িত্বে ক্লাশ করে না। যতক্ষণ ক্লাশ নিতে বলবো না ততক্ষণ তারা নিজ দ্বায়িত্বে ক্লাশে যাবে না। আবার চলমান স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের ছুটির কথা বলেন। নিজ ইচ্ছামত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন আবার চলেও যান। বিষয়গুলো আমি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মহোদয়কে অবগত করেছি। দেখি কি হয়। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটির সভাপতি এরশাদুল ইসলাম এরশাদ গনমাধ্যম কে জানান, আমি সভাপতি হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ১৪ টি নতুন ফ্যান কারেন্টের তার স্থাপন করেছেন, প্রধান শিক্ষক কক্ষের উপরের টিন মেরামত করেছেন, তিনটি রুমের দেয়াল পলেস্টার বারেন্দা নির্মাণ করা হয়েছে রুমগুলো ওয়ারিং এবং লাইটিং করা হয়েছে দেয়াল রং করিয়েছেন এবং একটি সাইটওয়াল নির্মাণ করেছেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলের মাঝে কথা বলে শিক্ষকদের গ্রুপিং বন্ধে মোক্ষম ভুমিকা রেখেছি। তারপরও কিছু শিক্ষক প্রতিষ্ঠান নিয়ে বৈরি মনোভাব লক্ষনীয়। আমি স্কুলে পরিদর্শনে গেলে অভিযুক্ত শিক্ষকরা আমাকেও এড়িয়ে চলেন। প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সার্বিক বিষয়াদী আমাকে অবগত করেছেন। অতিদ্রুত আমি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলের সমন্বয়ে একটি মিটিং করে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করবো। তা – না হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মহাদায়ের সহযোগীতায় প্রতিষ্ঠান বাচাঁতে যা কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তাই করাবো। অন্যদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফ-উজ জামান সরকার এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, জলঢাকায় অতিরিক্ত শিক্ষা অফিসারের দ্বায়িত্ব পালন করছি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন গনমাধ্যম কে বলেন, জানা মতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে এডহক কমিটির সভাপতি রয়েছে। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে তলব করে সার্বিক বিষয়াদী তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কার্যকারি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
