ePaper

জলঢাকায় বিবাহ রেজিস্ট্রার বইসহ ভূয়া কাজী আটক!  অতঃপর গোপন যোগসাজশে লাপাত্তা

মিলন পাটোয়ারী, জলঢাকা

নীলফামারী জলঢাকায় বিবাহ রেজিস্ট্রার বইসহ দুই ভূয়া কাজীকে আটক করে জনগণ। অতঃপর গোপন যোগসাজশে লাপাত্তা হয় ওই কাজী। গত ২১শে জুলাই সোমবার দিবাগত রাত ৯টায় উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের গোপালঝাড় চরভরট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সুত্রমতে গোপালঝাড় চরভরট এলাকার আতিকুল ইসলামের কন্যা নিসা আক্তারের সাথে পার্সবর্তী চরভরট পশ্চিম পাড়া বাসিন্দা মহাসিন ইসলামের ছেলে এয়াজুল ইসলাম ( ২৪ ) এর বিবাহ সুসম্পূর্ণ করতে কাজীর ডাক পরে পার্সবর্তী মহির উদ্দীন নামের এক ব্যক্তির উপর। মেয়ের বাবা ওই ব্যক্তিকে শৌলমারী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কাজী মাহাফুজ আলীকে আনতে বলেন। মহির উদ্দিন জানান, অত্র ইউনিয়নের সরকারি রেজিষ্ট্রেশনকৃত কাজী নিয়ে শৌলমারী চরভরট নদী পার হওয়ার সময় জানা যায় আগেই কাজী গিয়ে বিবাহ সম্পূর্ণ করেছে। তিনি বলেন, আমি ভাবলাম হয়তো আমাদের কেউ কাজী নিয়ে এসেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই বালাগ্রাম ইউনিয়নের গোলাম রব্বানী কাজী ও কৈমারী ইউনিয়নের আনোয়ারুল ইসলাম আনাও কাজীকে নিয়ে এসেছেন মেয়ের চাচা আনারুল এবং নজরুল মাষ্টার। তখন কাজীর নিকট বিবাহ ও কাবিননামা বইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে আমাদের টাউট হয়। পরে এদিক ওদিকি ফোন করে জানতে পারি তাড়া ভূয়া কাজী হিসাবে সনাক্ত হয়। তখন কাবিননামা বই সহ তাদের কে জনগণ আটক করে। জানা যায়, প্রায় ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের সাবেক শিক্ষক নজরুল ইসলাম তাকে ভাগিয়ে দিতে সাহায্য করে। এ বিষয়ে শৌলমারী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কাজীর সফর সঙ্গী ওয়াজেদ আলী জানান,  জলঢাকা পৌরসভার সরকারি রেজিষ্ট্রেশনকৃত কাজী মাহফুজ আলী ভাই অতিরিক্ত দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে শৌলমারী ইউনিয়নের বিবাহ ও কাবিননামা সম্পাদন করে আসিতেছে।অতিরিক্ত কাজীর সফর সঙ্গী হিসেবে থাকি বলে তিনি দ্বায়িত্ব দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত বিবাহ সম্পাদন করতে গিয়ে জানি জনগন রেজিস্ট্রার বইসহ ভুয়া কাজীকে আটক করেছে। প্রকৃতপক্ষে আটককৃত দুই ব্যক্তি নিয়োগপ্রাপ্ত কোন সরকারি কাজী নয়। আমার ইউনিয়নে তাদের আশাও সমুচিত হয়নি যা অনিয়ম তান্ত্রিক। এটি তারা কেন করছে জানি না। অন্যদিকে ঘটনার দিন ভূয়া কাজী আটকের খবরটি চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হলে গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই শৌলামারী গোপালঝাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনের রাস্তা দিয়ে দুটি বাইকে করে তাদের ভাগিয়ে দিয়ে সহায়তা করে নজরুল ইসলাম ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। পরে আদর্শ বাজারে গিয়ে অভিযুক্ত আনোয়ারুল ইসলাম আনাও ভুয়া কাজী সাক্ষাৎ হলে তিনি গণমাধ্যমকে তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা রিপোর্ট করবেন করেন এতে আমার কোন মন্তব্য নাই। তবে আমাকে গোলাম রব্বানী কাজী ডাকে নিয়ে জান এবং বই টা আমার না গোলাম রব্বানীর। তবে বালাগ্?াম ইউনিয়নের কাজী বেলাল হোসেন গনমাধ্যম কর্মী কে জানান বর্তমান সরকারি কাজী আমি, আমার ইউনিয়নে গোলাম রব্বানী কাজী নয়ে তিনি ভূয়া সে অনেক জায়গায় কাজী পরিচয় দিয়ে রেজিস্ট্রি করে আসিতেছে। সুত্রমতে আটককৃত বিবাহ ও রেজিস্ট্রার বইটি বালাগ্রাম ইউনিয়নের প্রবীন কাজী গোলাম রব্বানীর। বইয়ের সুত্রধরে অভিযুক্ত কাজী গোলাম রব্বানীর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, ও বই আমার নয় তাছাড়া ঘটনার দুইদিন পর জানতে পারেছি এই বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। কৈমারী ইউনিয়নের সরকারি কাজী নাজমুল ইসলাম জানান, আনোয়ারুল ইসলাম কৈমারী ইউনিয়নের কোন সরকারি কাজী নয়। নজরুল ইসলাম মাষ্টার জানান, রব্বানী কাজীকে আমি ডেকেছি তিনি এই দিকে অনেক বিবাহ রেজিস্ট্রি করেছিলেন এই বলে তাকে ডাকা হয়েছে এখন যে তিনি ভূয়া তা জানা ছিল না। অপরদিকে শৌলমারী ইউনিয়নের অতিরিক্ত দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কাজী মাহফুজ আলী জানান, ভুয়া কাজী আটকের বিষয়টি সেই দিনেই শুনেছি। আটককৃত দুইজনেই রেজিষ্ট্রেশনকৃত কোন কাজী নয়। তিনি আর বলেন আমি অধিকাংশ ইউনিয়নে শুনতে পাই যে তারা কাজী পরিচয়ে বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার করে আসিতেছে, এবং কাজীগনের সহি সীল জাল করিয়া সাধারণ মানুষ কে কাবিন নামা দিয়ে থাকেন এতে অনেক মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। স্থানীয় লোকজন বলেন কাজী পরিচয়ে এলাকায় অন্যায়ভাবে বিয়ে সম্পাদন করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরেই অভিনব ওই শাস্তিতে ভুয়া কাজীদের উপদ্রব কমবে বিয়ের মতো একটি স্পর্শকাতর কাজ ভুয়া কাজী নিবন্ধন করবেন তা মেনে নেওয়া যায় না। তাই স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা রেজিস্ট্রার সোহেল রানা মিলনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, রেজিস্ট্রার বইসহ ভুয়া কাজী আটকের কোন তথ্য অফিসে আসেনি। তবে ভূয়া কাজী সমাজে একপ্রকার ব্যধি। এ সমস্ত কাজীর নিকট জনসাধারণ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। জেলা রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে ভূয়া কাজীদের ব্যাপারে প্রচারণা অব্যহত আছে। বিষয়টি সরজমিন তদন্ত সাপেক্ষে ওই ভূয়া কাজীর সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় কার্যকারি পদক্ষেপ গ্রহন করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *