ePaper

চিরনিদ্রায় শেষ ঠিকানার কারিগর মনু মিয়া

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মনু মিয়া (৬৭)। কবর খুড়ে ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। তিন হাজারের বেশি কবর খোড়ার পর অবশেষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বাহাউদ্দিন ঠাকুর তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। মনু মিয়ার মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জীবনের প্রায় অর্ধশত বছর তিনি ব্যয় করেছেন কবর খননের মহান কাজে, বিনিময়ে কখনো কিছু চাননি। আশপাশের গ্রাম ও জেলাজুড়েও পরিচিত ছিলেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে। প্রায় ৪৯ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে তিনি কবর খুঁড়েছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষের। একটি ঘোড়ার পিঠে চড়ে তিনি ছুটে যেতেন মৃতের বাড়িতে। এই কাজের জন্যই তিনি একসময় দোকান বিক্রি করে কিনেছিলেন প্রিয় ঘোড়াটি। স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা জানান, কিছুদিন আগে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন মনু মিয়া। সেই সময় দুর্বৃত্তরা তার বহু বছরের সঙ্গী প্রিয় ঘোড়াটিকে হত্যা করে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। রোকন রেজা বলেন, ‘আমি হাসপাতালে তাকে দেখতে গেলে বলেছিলাম, অনেকে আপনাকে নতুন ঘোড়া কিনে দিতে চায়। তখন তিনি বলেছিলেন, আমি এই কাজ করি শুধু আল্লাহকে খুশি করতে। মানুষের কাছ থেকে কিছু নিতে চাই না।’ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঠাকুর বলেন, ‘ঘোড়ার মৃত্যুর পর থেকেই মনু মিয়া শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে এলেও আর আগের মতো হয়ে উঠেননি। তার মৃত্যুতে আমরা একজন দয়ার সাগর, নিঃস্বার্থ মানুষকে হারালাম। এমন মানুষের অভাব কখনো পূরণ হওয়ার নয়।’ স্থানীয়রা জানান, মনু মিয়া শুধু একজন কবর খননকারী নন; তিনি ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। মৃত্যুর পরও বহু মানুষের দোয়া, শ্রদ্ধা ও স্মরণে বেঁচে থাকবেন তিনি। বিকাল সাড়ে ৫টায় তার নিজ এলাকায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর ইকবাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *