ঋণের বোঝা কমাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য কমাল সরকার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

 অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ঠিক করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চেয়ে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ অঙ্ক কমিয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। 

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৩.৬ শতাংশ।

সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।  এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট। এর আগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বাজেট টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা বা জিডিপির ৯ শতাংশ রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সরকারের ব্যয়ের খাতের মধ্যে এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সুদ ব্যয় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদ্যুৎ ও সার বাবদ ভর্তুকি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের উপর ভরসা করছে সরকার। এছাড়া বিশাল এ ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করেছে।

ছক অনুযায়ী, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেবে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ হিসাবে নেবে ৯৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা আছে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

আসন্ন বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সরকার সবচেয়ে বেশি ধার নিতে চায় ব্যাংক খাত থেকে। যার পরিমাণ ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এরপর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সুদ পরিশোধেও ব্যয় বাড়ছে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ উৎস—সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বেশি থাকায় সুদের বোঝাও ভারী হচ্ছে। আগামীতে রাজস্ব আদায়ের হার না বাড়লে ভবিষ্যতে সরকারের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় পর্যন্ত ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। এ ঋণ পরিশোধে এখন ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। ফলে আসন্ন বাজেটের ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ অর্থ সুদ পরিশোধে ব্যয় করবে বলে লক্ষ্য ঠিক করেছে।

 সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা।

এবারের বাজেট উপস্থাপনে সংসদ না থাকায় কোনো সংসদীয় আলোচনা বা বিতর্ক হবে না। তবে ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জনমত নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে, আর সেই মতামতের ভিত্তিতে বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। চূড়ান্তকরণের পর যেকোনো একদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেট কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *