বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌ-পথ সরব হয়ে উঠেছে। উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে বৈশাখ মাসের শুরুতে শুকিয়ে চর জেগে ওঠা যমুনা নদীতে পানি ঢেউ খেলে যাচ্ছে। আর পানির ঢেউয়ে নদীর ১১২টি চরে নৌ চলাচল শুরু হয়েছে। গত তিনদিন ধরে এই পথে চরের বাসিন্দারা সহজে চলাচল ও চরে উৎপাদিত কৃষি পণ্য শহরের হাটে বাজারে বিক্রি করতে পারছে।
জানা যায়, বগুড়া সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি এবছর গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে প্রায় শুকিয়ে যায়। নদীজুড়ে পানি ছিলো না। বালু চরে ঢেকে যায় নদী বক্ষ। বালুর চর জেগে যাওয়ার কারণে নৌ পথগুলো বন্ধ হয়ে যায়। নৌপথ বন্ধ হয়ে গেলে ১১২টি চরের মানুষগুলো দুর্ভোগে পড়ে। চরের জমিতে চাষকৃত ফসল পরিবহনে, অসুস্থ হলে এবং উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যে কেহ উপজেলা সদরে যোগাযোগ করতে হলে দুর্ভোগের শেষ ছিলো না। যমুনাপাড়ের মানুষ বা বাঙালি নদী পাড়ের মানুষরা মোটরসাইকেল, সাইকেল অথবা পায়ে হেঁটে নদী পাড়াপাড় হতো। কৃষক কৃষাণিরা ঘোড়ার গাড়ি এবং গরুর গাড়ি দিয়ে তাদের ফসলাদি, জমির সারসহ সকল প্রকারের কৃষিপণ্য পরিবহন করত। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর খেয়া ঘাটগুলো বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত যাত্রী এবং মালামাল উঠানামা ও নৌকার শ্যালো মেশিনের শব্দে আবারও মুখরিত হতে শুরু করেছে নৌঘাটগুলো। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে উপজেলার কালিতলা, মথুরাপাড়া, দেবডাঙা, পারতিতপরল, রৌহাদহ এবং বাঙালির ছাগলধরা, হিন্দুকান্দি, নারচীসহ প্রভূতি ঘাটগুলোতে। ঘাটগুলো এখন নানা পেশাজীবীর মানুষ দিয়ে মুখরিত। পানি বাড়ার ফলে যমুনার ডাকাতমারা, মূলবাড়ী, ইন্দুরমারা, কাজলা, বেনিপুর, বাওইটোনা, বেড়াপাঁচবাড়িয়া, চরদলিকা, চালুয়াবাড়ী, বেনিপুর, শোনপচা, চরঘাগুয়া প্রভূতি চরসহ প্রায় ১১২ টি চরের মানুষরা তাদের নিজস্ব নৌকা নিয়েই এখন নদীপথে সহজেই চলাচল করতে পারছেন। কিন্তু নদীতে বর্ষা মৌসুমের আগেই পানি দেখা দেওয়ায় নদী পাড়ের মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে। নদীর এক পাড় থেকে আরেক পাড়ে উৎপাদিত ফসল নামছে। লোকজন সহজে চলাচল করতে পারছে। কালিতলা নৌঘাটটি গত ডিসেম্বর মাসে যমুনার নাব্যতা সংকটে সদর ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ীর সামনে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এতে যাত্রীদের কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে এবং নানা ধরনের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে গত মাসে এটি পুনরায় কালিতলায় নিয়ে আসা হয়েছে। নৌঘাটটি ফিরে আসায় কালিতলা নৌঘাটের প্রাণচাঞ্চল্য পুনরায় ফিরেছে। নৌঘাটের দোকানগুলো পুনরায় বেচাকেনায় মুখরিত হয়েছে। ফলে দোকানিদের মুখে আবারো হাসি ফুটতে শুরু করেছে।
সারিয়াকান্দি সদরের খেয়া ঘাটের মাঝি আলতাফ আলী জানান, খালে পানি না থাকায় আমার খেয়া নৌকা গত ৪ মাস ধরেই বন্ধ ছিল। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে আমার খেয়ার নৌকা আবার পুরোদমে চলাচল শুরু করেছে। নানা ধরনের মালামাল আর যাত্রী দিয়ে আমার খেয়ার নৌকা এখন প্রায় সবসময় পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছে।
সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাফি জানান যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সহজেই কৃষিপণ্যগুলো বাজারে নিয়ে = যাচ্ছে কৃষকরা। এতে কৃষিপণ্য পরিবহণে খরচ কম হচ্ছে। পণ্যগুলো বিক্রয় করে ন্যায্যমূল্য ঘরে আনতে পারছেন। এছাড়া বন্দর হতে সারসহ নানা ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সহজেই ঘরে আনতে পারছেন।
কালিতলা নৌঘাটের নৌকার মাঝি আমিরুল ইসলাম বলেন, সারিয়াকান্দিতে অভ্যন্তরীণ নৌরুটে যাত্রীর সংখ্যা মোটামুটি বৃদ্ধি পেলেও আন্ত:জেলা বা দূরপাল্লার যাত্রীর সংখ্যা এখনো বৃদ্ধি পায়নি। এখনো নদীর নাব্যতাপুরোপুরি ফিরে আসেনি তাই দূরপাল্লা অর্থাৎ কালিতলা বা মথুরাপাড়া হতে গাইবান্ধার ফুলছরি, জামালপুরের গুটাইল, উলিয়া, সিরাজগঞ্জের কাহিপুর, টাঙাইলের ভুঁয়াপুর প্রভূতি নৌরুটে যাত্রীর সংখ্যা খুবই কম।
সারিয়াকান্দিতে দায়িত্বে থাকা গেজ রিডার পরশুরাম জানান, গত ৪ মে থেকেই যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার সকালে যমুনা নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১১.৪৪ মিটার। যা বিপদসীমার ৫.২৬ মিটার নীচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টায় পানির উচ্চতা ছিল ১১.১০ মিটার এবং বুধবার ছিল ১০.৬৮ মিটার। অর্থাৎ গত ৩ দিনে যমুনার পানি ৭২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বগুড়া জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, উজান থেকে বয়ে আসা পাহাড়ী ঢলের কারনে গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা এবং বাঙালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনো বন্যা হাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। পানি আর একটু বেড়ে আবারও কমতে শুরু করবে। মে মাসে নদ নদীর পানি এ রকমই বাড়বে এবং কমবে। তবে জুন মাস থেকে স্থায়ীভাবে বাড়া শুরু হবে। যা বেশ কয়েকমাস অব্যাহত থাকবে।