লালমনিরহাটে একটি সেতু করতে পারে ২০ হাজাঁর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের রত্নাই নদীর সরেয়ারতল নামক ঘাটে দীর্ঘদিন ধরে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন ওই এলাকার ৮ টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বর্ষাকালে নদীটির দুই পাশে ৮ গ্রামের ২০ হাজাঁর মানুষের একমাত্র ভরসা কলাগাছের ভেলা, নৌকা। অন্য সময় নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে চলাচল করতে হয় স্থ’ানীয় ২০ হাজাঁর মানুষকে। রত্নাই নদীর পূর্ব দিকে কুলাঘাটের শিবের কুটি, দক্ষিণ শিবের কুটি, বনগ্রাম ও বোয়ালমারী, পাশের ইউনিয়ন মোগলহাটের ভাটিবাড়ি ও কোদাল খাতা এবং পশ্চিম দিকে কুলাঘাটের ধাইরখাতা ও লালমনিরহাট পৌরসভার উত্তর সাপটানা অবস্হিত। স্থ’ানীয় সূত্রে জানা যায়, রত্নাই নদীর পূর্ব দিকের গ্রামের অনেক শিশু শিক্ষার্থীসহ স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা- নদীর পশ্চিম দিকের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। আবার নদীর পশ্চিম দিকের অনেক শিশু শিক্ষার্থীসহ স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-পূর্ব দিকের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে যায়। নদীর পশ্চিম দিকের মানুষ চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনে নদীর পূর্ব দিকের শিবের কুটি কমিউনিটি ক্লিনিকে যেতে হলে নৌকা কিংবা বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয়। আর পূর্ব দিকের গ্রামগুলোর অসুস্থ’ রোগীদের সুচিকিৎসার প্রয়োজন হলে জেলা শহরের সদর হাসপাতালসহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। কিন্তু রত্নাই নদীর ওপর পাকা সেতু না থাকায় নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য কোনো যানবাহন নদীর পূর্ব দিকের গ্রামগুলোতে প্রবেশ করতে পারে না। তাই উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ জন। কুলাঘাট শিবের কুটি গ্রামের বাসিন্দা ও মোগলহাট ইউনিয়নের আবুল মেম্বার বলেন, রত্নাই নদীর সরেয়ারতল ঘাটের নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে প্রতিদিন মোটর সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থ’ল উপজেলায় যাই। অনেক ভয় হয়-কখন কি হয়ে যায়। নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোতে উঠলে গা শিউরে ওঠে। কবে যে সরেয়ারতল ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে? একইভাবে চলাচলের ভোগান্তির কথা জানান পশ্চিম বড়ুয়া গ্রামের আনোয়ার মাষ্টার-তিনি বলেন, জেলা শহর হয়ে বিভাগীয় রংপুর শহর ও রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন কাজে যেতে হয় আমাদের। তবে যেখানেই যাই না কেন কিংবা গ্রামের বাড়িতে আসা–যাওয়া করতে হলে রত্নাই নদীর সরেয়ারতল ঘাট পার হয়ে যেতে হয়। ওই ঘাট পার হতে সব সময় ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। এতো উন্নয়নের গল্প শুনি। সরেয়ারতল ঘাটের সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছাড়া কাজের কাজ কিছুই তো দেখি না। স্থ’ানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিরা এই দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সেতু আর নির্মাণ হয়নি। কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বলেন, আমি এক যুগের বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। লালমনিরহাট সদর -৩ আসনের সংসদ সদস্যরা রত্নাই নদীর উপর সরেয়ারতল ঘাটে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি ডিও লেটার দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি। এলজিইডির পক্ষ থেকে চিঠি লেখালেখি আর নদীর সরেয়ারতল ঘাটে নানা মাপজোখ হয়। দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি সেতু নির্মাণ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে কি হবে-সেটা দেখার বিষয়। লালমনিরহাটের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মন্জুর কাদের ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, কুলাঘাটের রত্নাই নদীর সরেয়ারতল ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণ করার জন্য ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছি। প্রস্তাবিত পাকা সেতুর দৈর্ঘ্য ১২৫ মিটার এবং সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় প্রায় তিন কোটি টাকা। যত তারাতাড়ি সম্ভব সেতুর কাজ চালু করা হবে।