চাকমা সম্প্রদায়ের ফুল বিঝুর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় বিঝু উৎসব। বুধবার ভোর থেকে চেঙ্গী, ফেনী ও মাইনী নদীতে ফুল দেয়ার মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়িতে শুরু হয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক ও প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে নদীর পাড়ে হাজারো তরুন-তরুণীর মিলন মেলায় পরিণত হয়। পাহাড়ি সম্প্রদায়ের তরুন-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা হৈ-হুল্লোড় করে ফুল তুলে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে নদী-খালে ভাসিয়ে পুরাতন বছরের গ্রানি মুছে নতুন বছরের শুভ কামনায় নিজেদের পবিত্রতা কামনা করে। এছাড়া ফুল দিয়ে ঘরের প্রতিটি দরজার মাঝখানে মালা গেঁথে সাজানো হয়। চেঙ্গী নদীতে চাকমা সম্প্রদায়ের ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হকও অংশ নেন। বৈসাবি উৎসব দেখতে এসেছে অনেক পর্যটকও। উল্লেখ্য যে, বৃস্পতিবার(১৩ প্রিল) মূল বিঝু আর পরের দিন শুক্রবার (১৪এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপজ্জ্যা পালন করবে। এসময় ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। একই সাথে বৃহস্পতিবার (১৩এপ্রিল) ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের হারি বৈসু, শুক্রবার (১৪এপ্রিল) বৈসুমা, শনিবার (১৫এপ্রিল) বিসি কাতাল অপর দিকে শুক্রবার(১৪এপ্রিল) খাগড়াছড়িতে মারমা সম্প্রদায়ে সাংগ্রাইং উৎসবে ঐতিহ্যবাহী জলকেলি বা পানিখেলা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হবে বর্ষ বরণ উপলক্ষে র্যালী অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়ি সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সমরপ্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উসব পালন করে আসছে। যা সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে ‘ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, ‘মারমা ভাষায় সাংগ্রাই’ এবং চাকমা ভাষায় বিঝু’ নামে এ উৎসব পালন হয়ে থাকে। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়। চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের পাশিপাশি তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, ম্রো, খুমি, আসাম, চাক ও রাখাইনসহ ১৩ ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও অবস্থানকে বৈচিত্রময় করে করে তুলতে প্রতি বছর চৈত্রের শেষ দিন থেকে ‘বৈসাবি’ উৎসব পালন করে থাকে। বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি, সমৃদ্ধি ও ঐক্যের বন্ধন আরো সু-দৃঢ় হোক এই প্রত্যাশা সকলের।