বৈসাবিতে মেতে উঠেছেন পাহাড়িরা। শুরু হচ্ছে তিন দিনের উৎসব। পাহাড়িদের ঘরে ঘরে আয়োজন করা হবে উৎসবটি। চাকমাদের প্রথা অনুযায়ী বুধবার পালিত হবে ফুলবিজু। বৃহস্পতিবার মূলবিজু এবং শুক্রবার উদযাপিত হবে গোজ্যেপোজ্যা দিন। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে বাংলাবর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসবটি পালন করে থাকেন। পাহাড়িদের এ প্রাণের উৎসবটিকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, রাখাইনরা সাংক্রান এবং অহমিয়া জনগোষ্ঠী বিহু নামে উদযাপন করে থাকে। আর ত্রিপুরাদের ‘বৈসুক’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ ও চাকমাদের ‘বিজু’- এ তিন শব্দের আদ্যাক্ষর নিয়ে সংক্ষেপে বলা হয় বৈসাবি। প্রথম দিন ফুলবিজুতে ভোরে নদী, হ্রদ বা পাহাড়ি ঝিরি-ঝরনার জলে ফুল ভাসিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে নিবেদন করা হবে পুষ্পাঞ্জলি। এর মধ্য দিয়েই সূচিত হবে তিন দিনের উৎসব। এদিন রাঙামাটিতে সার্বজনীন ফুল ভাসানো হবে রাজবন বিহারের পূর্বঘাটে। এতে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা হবে অতীতের যত দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি দূর করে নতুন বছরের সুখ শান্তি, সফল ও মঙ্গলময় ভবিষ্যতের। তিন দিনের মূল উৎসবে ঘরে ঘরে যার যা সাধ ও সাধ্যমতো আয়োজন চলবে আপ্যায়নের। এদিকে উৎসবটিকে সামনে ঘিরে পালিত হচ্ছে ব্যাপক কর্মসূচি। পাহাড়জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এ উপলক্ষ্যে রাঙামাটিতে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা বুধবার শেষ হচ্ছে। সোমবার অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাঙামাটি চিংহ্লামং মারী স্টেডিয়ামে জুম খেলাধুলা, বিকাল ৩টায় বলী খেলা এবং সন্ধ্যায় কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বুধবার সকাল সাড়ে ৬টয় শহরের রাজবন বিহার পূর্বঘাটে আনুষ্ঠানিক ফুল ভাসিয়ে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন এবং সকাল ১০টায় ত্রিপুরাদের গড়াইয়া নৃত্য আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া ১৬ এপ্রিল জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়ায় উদযাপিত হবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসব। মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থা (মাসাস) এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। উৎসব উপলক্ষ্যে ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবার প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উসৈশিং এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু), খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীসহ অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।