দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্কুল ছাত্রীর মাথার চুল কেটে মুখে কালি দিয়ে পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দেলজান বেগম (২৬) ও কুলসুম বেগম (৩৫) নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ৫নং সুজালপুর ইউনিয়নের বড় শীতলাই গ্রামে। জানা যায় শীতলাই গ্রামে মহসেনা মা ও শিশু কেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্নধার শারমিন মাহাবুব। জনকল্যানকর এ মাধ্যমে সেখানে তিনি কতিপয় অভাবী পরিবারের আস্থা ভাজন হয়ে উঠেছেন। সেই সুবাদে এলাকার একটি বিশেষ অংশে তিনি ম্যাডাম হিসেবে বহুল পরিচিত। তিনি সীমিত কয়েকটি উপকার ভোগী পরিবারের হর্তাকর্তা সেজে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নিজেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে দাপটের সাথে ভাল কাজের অন্তরালে বীরদর্পে নানান অপকর্ম চালিয়ে গেলেও এলাকার কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না বলে জানান বর্তমান ইউপি সদস্য হোসেন আলী ও সাবেক সদস্য মাহাবুব হোসেন চৌধুরী বাবুসহ অসংখ্য জনতার অভিযোগ। গত ২ এপ্রিল’২৩ ইং বিকেলে ম্যাডাম শারমিন মাহবুব ও তার কতিপয় সমর্থক মহিলারা দল বেঁধে প্রতিবেশী দরিদ্র মোস্তাফিজুর রহমান অরুর বাড়িতে হামলা চালায়। তার ৭ম শ্রেণীর স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী ১৪ বছরের মেয়েকে দেহ ব্যাবসায়ী ও চোর অপবাদে আটক করে মারপিট করে। জোর পুর্বক তার মাথার চুল কেটে মুখে কালি লাগিয়ে পৈচাশিক নির্যাতন করা হয়। হঠাৎ নির্মম এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় অরুর পরিবারসহ এলাকাবাসী হতভম্ব হয়, বর্বর নির্যাতনের শিকার পরিবারটি কিংকর্তব্য বিমুঢ় সহ দিশেহারা হয়ে পড়ে। বে-আইনি, চরম অন্যায়, মানবতা বিবর্জিত অমানুষিক মধ্যযুগীয় কান্ড ঘটিয়েও ম্যাডাম ক্ষ্যান্ত হননি। হুমকি দেয়া হয়েছে যদি কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয় তবে জীবনের তরে শিক্ষা দেয়া হবে, তার হাত অনেক লম্বা, উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে, দেখে নিবে ইত্যাদি। তাই অরুর পরিবার মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে দুইদিন ভয়ে গৃহবন্দি জীবন যাপন করে। পরবর্তীতে বিষয়টি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও মিডিয়া’র নজরে আসলে তাদের সহযোগিতায় পুলিশ প্রটেকশনে নির্যাতিত পরিবারটি ঘটনার ২ দিন পর বীরগঞ্জ থানায় এসে ভিকটিমের মা শরিফা বেগম বাদী হয়ে শীতলাই গ্রামের মৃত. মাহাবুব রহমানের মেয়ে শারমিন মাহাবুব (৫৫), মাসুদ রানার স্ত্রী মুক্তা বেগম(৩৪), মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী আমেনা বেগম (৪৫), মফিজুল ইসলাম মফিজের স্ত্রী দেলজান বেগম, মোহাম্মদ হাবিবের স্ত্রী কুলসুম বেগম( ৩৫), সুধীর মাস্টারের স্ত্রী ফুল বাসি (৩৪) ও নিয়াজের স্ত্রী মোছা: মনো ( ৪০) সহ মোট ৭জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন, মামলা নং ১০.(৫/৪/২০২৩ইং)। এ ব্যপারে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী প্রধান অভিযুক্ত শারমিন মাহবুবের সাথে ঘটনার পর দিন মুখোমুখি কথা হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমি আমার সর্মথিত অপরাপর মহিলাদের সাথে নিয়ে অরু মামার বাড়িতে গিয়ে তার কিশোরী মেয়ের মাথার চুল কাটার নির্দেশ দিয়েছি এবং চুল কর্তনের পর মুখে কালি দিয়ে অপদস্ত করা হয়েছে । তার মেয়ে দেহ ব্যবসায়ী ও চোর, আমার ঢাকাস্থ গুলশানের বাসায় তিন মাস অবস্থান করে আসার সময় মোবাইল ও ডায়মন্ডের জিনিস চুরি করেছে। ওখানকার ২/৩ টা পরিবার নষ্টা, ওদেরকে সমাজের ভিতর রাখা ঠিক নয়। সমাজের হতদরিদ্রের মাঝে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করছি, দুষ্টের লালন করার জন্য নয়। নির্যাতিত মেয়েটি সম্পর্কে আরো অনেক কুরুচিপুর্ণ মন্তব্য করেন অভিযুক্ত মায়ের বাড়ির ঐ ম্যাডাম। এক পর্যায় কিশোরীর বাবা’র সাথে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল মর্মেও উল্লেখ করেন তিনি। ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার দাবী করেছেন এলাকার সচেতন নাগরিক সমাজ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সকল পেশাজীবিরা। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার নামীয় দুই নারীকে গ্রেফতার করলেও প্রধান অভিযুক্ত পালিয়ে গেছে। স্পর্শকাতর, চাঞ্চল্যকর এই মামলার বাদী, ভিকটিম ও তাদের পরিবারের লোক জনের সাথে রাতেই থানায় এসে কথা বলেছেন ইউএনও (চলতি দায়িত্ব) রাজকুমার বিশ্বাস। তিনি তাদেরকে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। এ ব্যপারে বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সুব্রত কুমার সরকারের সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান কেউ আইনের উর্ধ্বে নন, অপরাধী যতবড় ক্ষমতাধর হউক না কেন, কোন ছাড় দেয়া হবেনা। মামলার তদন্তকারী এস আই আশরাফুল জানান, অভিযুক্ত ২ নারীকে গ্রেফতার করাসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।