সিজার করতে গিয়ে নবজাতকের পেট কেটে ফেলেছে ডাক্তার দম্পতি। নাড়ী ভুড়ি বেড়িয়ে পড়ায় শিশুটির অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়ে। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দীর্ঘ ২৪ ঘন্টা কোন প্রকার চিকিৎসা না পাওয়ায় অবশেষে মারা গেছে। এই ঘটনা ঘটেছে বুধবার বিকাল ৬ টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের বাঙ্গালীপুর মোড়ে অবস্থিত সূর্যের হাসি ক্লিনিকে। দুপুর ১২ থেকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ লাপাত্তা। সন্ধায় পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান উপস্থিত হলেও কোন চিকিৎসক ও ম্যানেজারসহ কর্তৃপক্ষের কেউই উপস্থিত হয়নি। প্রশাসনের সামনে মৃত নবজাতকের বাবা সৈয়দপুরের পার্শবর্তী দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বিলাইচন্ডি এলাকার রওশন সরকার রাজু বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় তার গর্ভবতী স্ত্রীকে ভর্তি করায় এই ক্লিনিকে। দিনশেষে বিকাল সাড়ে ৫ টায় সিজার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের ডা. মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী ডা. নূর নাহার নার্গিস। শিশুটির জন্মের পর ম্যানেজার সাজ্জাদুর রহমান জানান বাচ্চার জন্মগত সমস্যা হয়েছে এখানে চিকিৎসা সম্ভব নয় রংপুরে নিতে হবে। রাত ৮ টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক বলেন এই শিশুকে বাচানো সম্ভব নয় এবং আগামীকাল সকাল ১০ টার আগে বড় ডাক্তার আসবেনা। তাই রাতেই ক্লিনিকে ফেরত আসি। তখন থেকে মারা যাওয়া পর্যন্ত ক্লিনিকের ডাক্তাররা আমার বাচ্চার কোন ট্রিটমেন্ট করেনি। এমনকি আমরা যে রংলপুর থেকে ফিরে এসেছি কি করলাম বা কি করতে সে ব্যাপারে তারা কোন তদারকি বা পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করেনি। এক কথায় তারা কোন দায়িত্বই পালন করেনি। তাদের অবহেলার কারণেই আমার প্রথম সন্তানকে একদিনেই হারিয়ে ফেললাম। রাজু আরও বলেন, এখন বলছে বাচ্চার আগে থেকেই সমস্যা ছিল। অথচ কয়েকদিন আগেও আলট্রা সনোগ্রাম করেছি তাতে সব কিছু নরমাল ছিল। তারা সব ঠিক দেখেই তো সিজার করেছে। মূলতঃ সিজার করার সময় পেট কেটে ফেলায় নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে পড়েছে। তাছাড়া রংপুরে যেতে বললেও রেফার্ড স্লিপ বা কোন কাগজপত্র দেয়নি তারা। আমি এর বিচার চাই। এরপর ক্লিনিকের নার্স শাপলা বিশ্বাস বলেন, প্রিম্যাচিরিউট বেবি হওয়ায় শিশুটির নাভির কাছে চামড়া অপূর্ণাঙ্গ থাকায় কিছুটা নাড়ি বেরিয়ে এসেছে। আমরা তৎক্ষণাৎ রংপুরে নিয়ে যেতে বলেছি। কিন্তু রোগীর লোকজন ব্যবস্থা না নেয়নি। আপনার কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? কর্তৃপক্ষ পলাতক কেন? এ প্রশ্নেরও তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। ডা. মিজানুরের সাথে পুরাতন বাবুপাড়ায় তার ল্যাবজোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে তিনি বলেন, আমাদের কোন ভুল নাই। থানার ওসিকে জানিয়েছি। তিনি সব ম্যানেজ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তাই কিছুই হবেনা। আমরা নিয়মিত ট্যাক্স দেই। এটুকু সুবিধা তো দিবেই। আপনারা যতই নিউজ করেন কোন অসুবিধা নাই। উভয়পক্ষের কথা শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, কি কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। তাই শিশুর বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ দিবে। সে অনুযায়ী পুলিশি তদন্ত ও চিকিৎসা বিষয়ক তদন্তও হবে। তারপর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত লাশ নীলফামারী জেলা সদর হাসপাতালে পোস্ট মর্টেমের জন্য পাঠানো হবে এবং এরপর দাফন করা হবে। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি তদন্ত কমিটি করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা বিষয়ে প্রমান পাওয়া গেলে তারও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, সহকারী কমিশনার (ভুমি) আমিনুল ইসলাম, থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম! সাথে ছবি দেওয়া হয়েছে!