দেশের উত্তরের কৃষি নির্ভর জনপদ ঠাকুরগাঁও। বোরো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকেরা। পর্যান্ত পানি না থাকায় কৃষকেরা সমস্যায় পরে। বিশেষ করে উচু জমিগুলিতে পানি না থাকায় ধানক্ষেত ফেটে চৌচির হতে দেখা যায়। এতে করে মারাত্মক সমস্যায় পরেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। বেশ কিছু কৃষক শ্যালোমেশিন ও গভীর নলকূপের সাহায্যে ক্ষেতে পানি দিলেও কুলাতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় অবশেষে ২-৩ দিনের বৃষ্টির ফলে বোরো ক্ষেতে পানি জমেছে। বিশেষ করে উচু কৃষি জমিতে পানি জমায় কৃষকের মনে স্বস্তি এসেছে। ফলে পুনরায় ব্যস্ত হয়ে পরেছেন তারা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপর, চিলারং, নারগুন, বেগুনবাড়ি, খোঁচাবাড়ি, দানারহাট, বরুনাগাঁও, শীবগঞ্জ, রহিমানপুর, জামালপুর, পীরগঞ্জ, হরিপুর উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় কৃষকেরা বোরো ধান পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। দীর্ঘদিন পানির অভাব থাকলেও গত এক সপ্তাহে ২-৩ দিন বৃষ্টির পানিতে তারা নতুন করে বোরোতে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের বোচাপুকুর এলাকার কৃষক মো: মোমিনুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক বছরের মত এ বছর তিনি ৪ একর (৪শ শতক) জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। কিছুদিন শ্যালো ও গভীর নলকূপের সাহায্যে পানি দিলেও খরচ বেশি হওয়ায় বিপাকে পরেন। অবশেষে বেশ কয়েকদিনের বৃষ্টির ফলে উচু জমিগুলোতেও পানি জমায় তিনি দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট গ্রামের কৃষক ধনঞ্জয় বর্মন জানান, এ বছর আড়াই একর (২৫০ শতক) জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। বৃষ্টির পানির অভাবে তার বোরো ক্ষেত শুকিয়ে যাওয়ায় তার দুশ্চিন্তার যেন শেষ ছিল না। ২-৩ দিনের বৃষ্টিতে বোরোর ক্ষেতে পর্যান্ত পানি জমেছে। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বোরো ধানের আবাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ বছর ঠাকুরগাঁওয়ে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। এ মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন। যা গত বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয় ৫৯ হাজার ১১৪ হেক্টর। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭৩ মেট্রিক টন। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ -পরিচালক কৃষিবিদ মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ জেলা অন্যান্য ফসলের ন্যয় ধানের জন্যও বিখ্যাত। প্রচুর পরিমানে ধান এ ঠাকুরগাঁও জেলায় উৎপাদন হয়। প্রত্যেক বছর বোরো মৌসুমে কৃষকদের যাবতীয় পরামর্শ ও সেবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রদান করা হয়। এ বছরও দেওয়া হয়েছে। তবে পানির সামান্য সমস্যা থাকলেও ২-৩ দিনে জেলায় প্রায় ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ায় উচু-নিচু ক্ষেতে পানি জমেছে। বৃষ্টির পানিতে বোরোর পাশাপাশি ভুট্টা, শাকসবজি, লিচু, আমসহ বিভিন্ন চাষীদের উপকার হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হবে এবং কৃষকেরা এ বছরও ধানের ন্যর্য্য মুল্য পাবেন বলে প্রত্যাশা করছি।