ঠাকুরগাঁও জেলায় সরকারি-বেসরকারী বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকে সাঁওতালদের মুল শ্রোতধারায় আনতে নানা উদ্যোগ গ্রহন করা হলেও বণ্যপ্রাণি শিকার বন্ধ হচ্ছে না। তারা বিশেষ দিবস ছাড়াও দলবেঁধে বিভিন্ন এলাকায় নির্বিঘ্নে হত্যা করছে এসব বন্যপ্রানী। মাঝে মধ্যেই নানা বয়সীদের নিয়ে দল গঠন করে বিভিন্ন এলাকায়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, শেয়াল, বেজি, বাগডাসা, বনবিড়াল সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করতে দেখা যায়। কিছুদিন পূর্বে লক্ষ্য করা যেতো সাঁওতালদের বিশেষ দিবস উপলক্ষে বন্যপ্রাণি শিকার করা হতো। তবে ধীরে ধীরে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সংস্থা সাঁওতালদের নিয়ে কাজ শুরু করে। তাদের মূল স্রোত ধারায় নিয়ে আসতে নেওয়া হয় গুরুত্বপুর্ন পদক্ষেপও। বন্যপ্রাণি হত্যার প্রবনতা কমলেও এখনও সম্পুর্নরূপে বন্ধ হয়নি। বর্তমানে বিশেষ দিবস বা দিন ছাড়াও দেধারছে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থানে এসকল পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী প্রাণিকে হত্যার চিত্র চোখে পরে। এ কারনে বণ্যপ্রাণী আজ হুমকির মুখে। বর্তমানে এমনিতেই বিভিন্ন বণ্যপ্রাণী বিলুপ্তপ্রায়; এর উপরে এভাবে শিকার চলমান থাকলে পরিবেশের মারাত্ম ক্ষতি হতে পারে। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের বুড়িবাঁধ এলাকায় চোখে পরে একদল সাঁওতাল গম, ভুট্ট্রা ক্ষেতে বন্যপ্রাণী শিকার করছেন। এ সময় তারা তীর-ধনুক, বল্লম, লাঠিসোটা দিয়ে বেশ কয়েকটি বেজি হত্যা করে। তাদের শিকার করা দেখতে উৎসুক মানুষেরা সেখানে ভীড় জমায়। লক্ষ্য করা যায়, সাঁওতালদের ৪/৫ জনের দলটি গমের ক্ষেতের ভেতরে লাঠি দিয়ে আঘাত করছে এবং মুখ দিয়ে শব্দ করছে। এ সময় বেজিরা প্রাণভয়ে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। তখন সাঁওতালেরা তীর ছুঁড়ে তাদের শিকার করেন। শিকারীদের নাম, পরিচয় জানতে চাইলে তারা তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে শুধু জানায় তারা সাঁওতাল, তাদের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের ফাড়াবাড়ি শিমুলতলীতে। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা এ্যাড. ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, এখন বন্যপ্রানী ওরা মারে না ওরা। বর্তমানে শিকার নাই। সাঁওতালেরা যাতে বন্যপ্রাণী হত্যা না করে সে কারনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। ওদেরকে সংগঠন থেকে নিষেধ করা হয়েছে, যে এটি বে আইনী। ই-এসডিও প্রেমদীপ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের সতর্ক করা হয়েছে; তাই এখন আর এ জাতীয় ঘটনা ঘটেনা। ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী যে কোন ধরনের বন্যপ্রাণী শিকার করা সম্পুর্ন বি আইনি। বন বিভাগের পক্ষ থেকে সাঁওতালদের বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধে কোন প্রকল্প চালু নেই। তবে বেসরকারী সংস্থাগুলো ইচ্ছা করলে তাদের নিয়ে কাজ করতে পারে। আমরা যে কোন প্রোগ্রামে গেলে তাদের যথাসাধ্য বোঝানোর চেষ্টা করি। বণ্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বাংলাদেশের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কনক রায় বলেন, ইতিমধ্যে দেশের প্রায় সব জায়গাতেই সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যে এটি একটি অপরাধ। এর জন্য শাস্তির বিধানও রয়েছে। তবে বণ্যপ্রাণী হত্যা বন্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রমগুলো বৃদ্ধি করতে হবে। বণ্যপ্রাণী রক্ষা করলে আমাদের কি উপকার রয়েছে তা তাদের জানাতে হবে। নির্দিষ্ট এলাকার তথ্য থাকলে আমাদের জানালে আমরা ঐ এলাকায় গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহনের মাধ্যমে বণ্যপ্রাণী হত্যা রোধ করতে পারবো। বণ্যপ্রাণী ধরা, মারা, খাওয়া, ক্রয়-বিক্রয়, পাচার, দখলে রাখা বা শিকার করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। বণ্যপ্রানী দেশের সম্পদ, জীবন, জীবিকা ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। বণ্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ দমনে সকলে এগিয়ে আসবেন এবং এ সকল জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবেন এমনটাই প্রত্যাশা সবার।