ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট লাহিড়ী। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবারে এখানে হাট বসে। এক সময় এ হাটে ৫শ গরু বিক্রি হলেও এখন সেখানে ৩শ গরু বিক্রি হয়। গরু পালনের খরচের সঙ্গে গরুর দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা। তবে আগের মতো বর্তমান বাজারে গরু কেনাবেচা হয় না বলছেন হাট ইজারাদার। শুক্রবার (১০ মার্চ) সকালে সরেজমিনে লাহিড়ী গরুর হাটে দেখা যায়, কেউ হেঁটে, কেউ বা গাড়িতে করে এই হাটে গরু নিয়ে আসছেন। বেলা ১১টা বাজতে না বাজতেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় গরুর হাট।
বামুনিয়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী সহিদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আগের তুলনায় বর্তমান বাজারে গরুর দাম বেশি। আগে ৮০ কেজি ওজনের গরু ৫০-৫৫ হাজার টাকায় কিনতাম, কিন্তু সেই গরু এখন ৬০-৭০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। খামারিদের অভিযোগ, গোখাদ্যের দাম অনুযায়ী বর্তমানে গরু পালন করে আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না তারা। খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই কারণে মূলত এখন হাটে বিক্রির জন্য গরু উঠছে কম। প্রথমত, গরু পালনের খরচের তুলনায় হাটে দাম কম। তাই বাড়তি দামের আশায় এখনই বেশির ভাগ খামারি গরু বিক্রি করতে চাইছেন না। দ্বিতীয়ত, কোরবানির হাট সামনে রেখে যাঁরা গরু কিনতেন, তাঁরা এখন গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু কেনার সাহস করছেন না। তাদের ধারণা, এক বছরের ব্যবধানে গরু পালনের খরচ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ফলে আগেভাগে গরু কিনে তার পেছনে বাড়তি খরচ করে কোরবানির হাটে খুব বেশি লাভ করা যাবে না। ফলে হাটে গরু উঠছে কম। তবে গরু বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, এ মৌসুমে বিয়েশাদিসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়ায় গরুর মাংসের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে গরুর দামও বেড়ে গেছে। গরু বিক্রি করতে এসে রশিদুল ইসলাম বলেন, গত ৬ -৭ মাস আগে ৩২ — ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ছোট বাছি (মেয়ে গরু) গরু কিনেছিলাম। ৬ -৭ মাস ধরে লালন পালন করে সেই গরুর দাম আজ বলছে ৩২ -৩৫ হাজার। এতো দিন ধরে গরুটিকে যেগুলো খাওয়াছি ও তার পরিচর্যা করেছি সেটা বৃথা। কিন্তু কি করবো অভাবের সংসার টাকার প্রয়োজনে এই দামেই হতো গরুটা বিক্রি করতে হবে। গরু বিক্রেতা সুজন আলী বলেন, বর্তমানে জিনিসপত্রের যে দাম। গরুর খাবারেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন তো আর আগের মতো মাঠে গরু বাঁধা যায় না, ঘাসও নেই। যা খাওয়াতে হয় তা সব কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। আমাদের মতো ছোট ছোট খামারিদের এভাবে গরু পালতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাট ইজারাদার আলহাজ্ব মো. আব্দুর রশিদ ঢাকা মেইলকে বলেন, আগের তুলনায় এই হাটে এখন ১০ ভাগ হাট সেভাবে জমে না। আগে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার দিনে দেশি বিদেশি মিলে প্রায় ৪- ৫শ গরু ক্রয় বিক্রয় হতো, এখন কোনো দিন ৩শ গরুও ক্রয়-বিক্রয় হয় না। বাজারের অবস্থা ভালো না। মানুষের হাতে টাকা পয়সা কম, তাই বেচাকেনাও কমে গেছে। তারপরেও বর্তমানে প্রতি হাটে প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকার গরু ক্রয় বিক্রয় হয় এখানে। জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এখানে ৪২- ৮৫ কেজি ওজন থেকে ১১০- ১৩৫ কেজি ওজনের গরু ক্রয় বিক্রয় হয়। তবে বর্তমানে এখন গরুর দাম একটু বেশি। কশাইদের কাছে শুনেছি ৩৫ -৫০ কেজি ওজনের গরু ৩৫- ৪৫ হাজার টাকা করে কিনছেন তারা।