ঠাকুরগাঁও জেলার বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ইসিজি করান ওয়ার্ড বয়, আর প্রেসক্রিপশন লেখেন চিকিৎসকের সহকারী। রবিবার (৫ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক নেই। সেখানে রোগীদের ব্যান্ডেস, রোগী ভর্তি নেওয়া ও রোগীদের প্রেসক্রিপশন করে দিচ্ছেন সেখানকার দায়িত্বরত এমবিবিএস চিকিৎসকের সহকারী। এমন ঘটনা দেখে বুক চিনচিন করছে হঠাৎ করে এমনি রোগে রোগী সেজে সেই সহকারীর কাছে যান শরিফুল ইসলাম। দশ মিনিট বসিয়ে রেখে ওয়ার্ড বয়কে ইসিজি করার নির্দেশ দেন তিনি। কূল কিনারা না পেয়ে ইসিজির একটি ভ্যাকুয়ামের অংশ হারিয়ে ফেলেন ওয়ার্ডবয়। রোগীকে শুইয়ে রেখে সেটিকে খুজতে বের হয় সকলে। পনেরো মিনিট পর সে অংশটি খুঁজে পাওয়ার পর ইসিজি সম্পন্ন করেন ওয়ার্ডবয়। অপরদিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক এলেও রোগীদের প্রেসক্রিপশন লিখে যাচ্ছেন সহকারী। সরকারি হাসপাতালে এমন চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের। দক্ষ জনবল ও অতি দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সকলের। রোগী সেজে জরুরি বিভাগে যাওয়া শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি শুধু গিয়ে বললাম আমার বুকটা চিনচিন করছে। আর তিনি কোন কথা না শুনে আমাকে ইসিজি করাতে বললেন। আমার কাছে তো ইসিজির করার যে খরচ সেটা নাও থাকতে পারে। সরকারি হাসপাতালে তো খরচ বাঁচানোর জন্য আসা হয়। আর সেখানে এমবিবিএস চিকিৎসক থাকা অবস্থায় সহকারী চিকিৎসা দিচ্ছেন। যদি সহকারী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তাহলে আলাদা চিকিৎসকের প্রয়োজন কোথায়। আমি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দেওয়ার জোর দাবি করছি। চিকিৎসা নিতে আসা জহির রায়হান বলেন, মানুষ সুস্থ থাকার জন্য হাসপাতালে আসেন। সেখানে যদি মান সম্মত সেবা ও দক্ষ জনবল না দিয়ে সেবা দেওয়া সেটি কাম্য নয়। আশা রাখছি এটি কর্তৃপক্ষ দেখবেন এবং জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকের সহকারী মাহবুব আলম বলেন, কিছু কিছু প্রেসক্রিপশন আমি লেখি। আর বাকিগুলোতে স্যারকে ডেকে নিয়ে আসি। আর রোগীরা টাকা দিয়ে যায় সেগুলো আমি নেই না ড্রয়ারে রেখে দেই। তিনি থাকতে কেন সহকারী প্রেসক্রিপশন লেখবেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে দেখিয়ে দিয়ে কথা বলতে অসম্মতি জানান , ডা নাজমুলুর রহমান। এ ঘটনায় বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মিঠুন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমাদের ইসিজি করানোর মত কোন জনবল নিয়োগ না থাকায় ওয়ার্ডবয় দিয়ে করানো হয়েছে। আর সহকারী যদি নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রেসক্রিপশন করে থাকেন তাহলে ভুল করেছেন। আমরা বিষয়টি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্যারকে অবহিত করব। আশা রাখছি তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন ডা: নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে মোটেও ঠিক হয়নি। এরপরে আর সেখানে এমন ঘটনা ঘটবে না। আমরা বিষয়টি অবগত হলাম তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।