ছোট বেলা থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ। তাই ১০ বছর বয়স থেকেই উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলার হাটবাজারে বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই গলার সুর ও টিনের কৌটার ভিতরে সাইকেলের চাকার বল ঢুকিয়ে বাজনা বাজায় ও মুখ দিয়ে শিস বাজিয়ে বাঁশির সুর তোলেন এবং দর্শকদের গান গেয়ে শোনান। এতে দর্শকরা খুশি হয়ে যা দেন তা দিয়েই সংসার চালান তিনি। বলছিলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া চাপাতি গ্রামের মৃত নিমাইঞ্জুর ছেলে মো. ভুট্টু মিয়া (৪০) এর কথা। ছোট বেলায় বাবা-মাকে হারান। তার পর থেকে কাজ করে খেতেন তিনি। কাজ করতে করতে দুর্ঘটনায় ডান হাতের হাড় ভেঙে যায়। বর্তমানে হাড় জোড়া নিলেও হাত দিয়ে ভারি কোন কাজ করতে পারছেন না। তাই গানকেই জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও শহরের তিতুমীর সড়কের পাশে ইউসিবি ব্যাংকের নিচে গান গাইতে দেখা যায় তাকে। জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আব্দুর রহিম নামে এক দর্শক জানান, ভুট্টু মিয়াকে বিভিন্ন হাটবাজারে দেখেছি হাত দিয়ে কৌটা বাজিয়ে গান গাইতে। কিছু দিন আগে রোড বাজারে আমাদের দোকানের সামনেও গান করেছেন তিনি। কোন বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই তার গলার সুর ও গান মুগ্ধ করে মানুষজনকে। তার প্রতিভা ভালো। এই প্রতিভাকে পুঁজি করেই তিনি সংসার চালাচ্ছেন। হাসপাতালের ভেতরে বিক্রি হচ্ছে খোলা খাবার এস এম মৌমিদ হাসান নামে এক যুবক বলেন, রাস্তা দিয়ে হাটে যাচ্ছিলাম। অনেক মানুষজনের সমাগম দেখে আমিও দাড়িয়ে গান শুনছিলাম। তার গান গাওয়ার প্রতিভা দেখে সত্যিই আমি মুগ্ধ। জয়নাল নামে আরেক দর্শক বলেন, তার গান যে কোন মানুষকে মুগ্ধ করে। তাই খুশি হয়ে মানুষ ১০-২০ টাকা দেন। এতে তার সংসার চলে। নওসেদ নামে আরেক দর্শক তার গান শুনে বলেন, মানুষটির প্রতিভা আছে। সহযোগিতা পেলে তিনি হয়তো ভালো কিছু করতে পারবেন। ভুট্টু মিয়া বলেন, আমার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বতর্মানে সংসারে আমরা স্বামী-স্ত্রী ও ২ সন্তান। রাস্তা ঘাটে ও বিভিন্ন হাটবাজারে গান গেয়ে দৈনিক ৩ থেকে ৪শ’ আয় হয় ও আমার স্ত্রী দিন মজুরি দিয়ে যা আয় করেন তাতে করে কোন মতে সংসার চলে। যদি সহযোগিতা পেতাম তাহলে অন্তত তবলা বা ঢোল ও একতারা কিনতে পারতাম। টাকার অভাবে এসব কিনতে পারছি না। ভবিষ্যৎ ইচ্ছার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইত্যাদিতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার। আর ইত্যাদিতে যাইতে পারলে সেখান থেকে হয়তো হানিফ সংকেত আমাকে কিছু না কিছু সহায়তা করবেন বলে আশা করছি।