বই নিয়ে চলা সংকটের মাঝেও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সাড়ে এগারো হাজার বই পাঁচারের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১১ টায় সুন্দরগঞ্জ পৌর শহরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু চত্বরে উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজের আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
দুই ঘন্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক প্রভাষক মাসুদুর রহমান প্রামানিক, যুগ্ম-আহ্বায়ক ও উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি সাজেদুল ইসলাম, যুগ্ম-আহ্বায়ক ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, গোলাম কবির মুকুল, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম আহসান হাবিব মাসুদ, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আতাউর রহমান মাস্টার, পৌর আ’লীগের সভাপতি আহসানুল করিম চাঁদ, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা জাসদের সাবেক সভাপতি মুসলিম আলী মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, উপজেলা সিপিবির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম পিপুল, সুন্দরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বুলু, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহজাহান মিঞা, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মুন্সী আমিনুল ইসলাম সাজু, উদীচী উপজেলা সভাপতি এটিএম মাসুদ-উল ইসলাম চঞ্চল, যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম রানা, ছাত্রলীগ নেতা রুহুল আমিন, রতন মিয়া, সুমন মিয়া, ফুয়াদ হাসান প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বই চুরির ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও কয়েবার বই চুরির ঘটনা ঘটলেও অজ্ঞাত কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এবার সারাদেশে বই নিয়ে সংকট চলছে। এরই মাঝে বইয়ের গোডাউন থেকে সাড়ে ১১ হাজার বই চুরি করে মোটা অঙ্কের টাকার লোভে পাঁচার করা হয়। এই ঘটনা শুধু একটি নিছক চুরির ঘটনাই নয়। এটি সরকারের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন করেছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্য এটি ঘটানো হয়েছে। এতোগুলা বই চুরি করা মাধ্যমিক অফিসের অফিস সহায়ক মাজেদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা মনে করি এ ঘটনার সাথে দুর্নীতিবাজ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন মন্ডল জড়িত রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন মন্ডল প্রায় ১০ বছর থেকে সুন্দরগঞ্জে চাকুরী করছেন নির্বিঘ্নে বই চুরি,নিয়োগ বাণিজ্যে মদদদানসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের জন্য। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ যাদের কাছে গোডাউনের চাবি থাকে তারা কোনভাবেই এ দায় এড়াতে পারেন না। তাই তাকে আইনের আওতায় আনা দরকার।বক্তারা আরও বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার পহেলা জানুয়ারীতে বিনামূল্যে বই দেয়ার কর্মসূচিকে ব্যহত করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা কারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ মন্ডলের অপসারণ সহ জড়িতদের কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির দাবী করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারি রাতে সুন্দরগঞ্জ থেকে সাড়ে ১১ হাজার সরকারি বই ট্রাকে করে পাঁচারকালে ড্রাইভার ও হেলপারকে আটক করে বইগুলো উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু পশ্চিম থানা পুলিশ। এঘটনায় পরদিন ১৬ জানুয়ারি সুন্দরগঞ্জ থানায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন মন্ডল বাদি হয়ে তার অফিসের অফিস সহায়ক মাজেদ, ট্রাক ড্রাইভার শ্যামল ও হেলপার রাসেলকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি সুন্দরগঞ্জ থানার এসআই আরিফুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।পরবর্তীতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশের উপর দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। বিজ্ঞ আদালত প্রত্যেক আসামির ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।