নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এবার কিশোর গ্যাং এর হাতে এক কিশোরীকে (১৫) ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন, উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের আপ্তারামপুর গ্রামের মুন্সি বাড়ির মৃত মো.সাহাব উদ্দিনের ছেলে জুয়েল (২৪) ও একই ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ির মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে ইমন(২৩) । এ ঘটনায় দুই জনের নামে মামলা হলেও কিশোর গ্যাং-এর সদস্য টিটু হিরাসহ আরো কয়েকজন জড়িত রয়েছে এবং জড়িতরা সবাই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গিয়ার উদ্দিনের অনুসারী বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, ওই কিশোরীর বাবা পাঁচ বছর আগে মারা যায়। মা বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। এরপর থেকে ভিকটিম ও তার এক প্রতিবন্ধী বোনসহ তাদের ঘরে বসবাস করে আসছে। তার প্রতিবন্ধী বোন অসুস্থতার কারণে সম্প্রতি খালার বাড়ি চলে যায়। এই সুযোগে আসামি জুয়েল গত ৫ জানুয়ারি ও ৬ জানুয়ারি রাত সাড়ে নয়টা ও ১০টার দিকে কৌশলে বসত ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক কিশোরীকে ধর্ষণ করে। গত ৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রধান আসামির সহযোগীতায় ইমন কিশোরীকে মুঠোফোনে কল দিয়ে দরজা খুলতে বলে। ভিকটিম ভয়ে দরজা খুললে তাকে মুখ চেপে ধরে বসত ঘর থেকে তুলে নিয়ে রান্না ঘরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় ভিকটিম শোর-চিৎকার করলে বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসলে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে ভিকটিমের নিকটতম কোন আত্মীয় না থাকায় গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এদিকে ধর্ষনের ঘটনার সাথে জড়িতরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছের লোক হওয়ায় কেউ ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা। ধর্ষনের ঘটনার সাথে ফয়েজ, ইমন, ও টিটুহিরা জড়িত থাকলেও চেয়ারম্যান প্রভাব খাঁটিয়ে টিটুহিরার নাম এজাহার থেকে বাদ দিয়ে সক্ষম হয়। ধর্ষকরা প্রভাবশালীদের ছাত্রছায়ায় থাকায় ঘটনার দুই দিন পর পুলিশ বিষয়টি জানতে পারে। ধর্ষকদের সাথে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় মেম্বার ইকবাল হোসেন বলেন, ইমন সহ একদল সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকায় খুন, ধর্ষন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে এলাকার জন জীবন অতিষ্ট করে তুলছে। তাদের বিরুদ্ধে থানা সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট মামলা মোকদ্দমা রয়েছে। এদেরকে দমন না করলে এলাকায় মানুষ বসবাস করা মুসকিল হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে আলাইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ধর্ষকদের সাথে ছবি থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর পুরো আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের সবাই আমার লোক । আমার সাথে ছবি যে কারো থাকতেই পারে। কেউ অপরাধ করলে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমি পুলিশকে বলেছি। চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন আরো বলেন, ধর্ষিতার মা বাবা কেহ না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল সহ যে কোন খাদ্য সামগ্রী ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করে আসছি। সে এবং তার অন্য বোনকে আমরা ও এলাকাবাসী মিলে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা ছিলো। কিন্তু এ কুলাঙ্গারদের কারণে তাও ভেস্তে গেলো। বেগমগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,এই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দুজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ঘটনার সাথে আর কেউ জড়িত আছেকিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা করছে।
###