যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থীকে কেন গুলি করেছেন এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ক্যামব্রিজ পুলিশ কর্তৃপক্ষ। পুলিশ জানায়, ফয়সাল পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করলে তারা তাকে গুলি করতে বাধ্য হয়। ২০ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশির নাম সৈয়দ ফয়সাল। বোস্টনের টিভি চ্যানেল এনবিসি, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। নিহত ফয়সালের পুরো নাম সৈয়দ আরিফ ফয়সল ওরফে প্রিন্স বলে তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।
খবরে জানানো হয়, স্থানীয় সময় বুধবার (৪ জা্নুয়ারি) দুপুরে পুলিশের গুলিতে ফয়সাল গুরুতর আহত হন। পরে বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার বেলা সোয়া ১টার দিকে কেমব্রিজের একজন বাসিন্দা জরুরি নম্বর ৯১১–এ ফোনে করে জানান একজন ব্যক্তি একটি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছেন। তার হাতে চাপাতির মতো ধারাল অস্ত্র রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ গিয়ে সিডনি স্ট্রিটের একটি ভবনের পেছনে তাকে দেখতে পায়। পুলিশ যাওয়ার পর ফয়সাল অস্ত্র হাতে সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে দেখা গেছে তার একটি এক ফুট লম্বা একটি ছোরা ছিল। তিনি সেই ধারাল ছুরি হাতে পুলিশের দিকে এগিয়ে আসছিলেন। ফয়সালকে গুলির আগে পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে ধরতে বেশ কিছুক্ষণ ছোটাছুটি করেন। তাকে থামাতে প্রথমে স্পঞ্জ রাউন্ড ছোড়া হয়। কিন্তু এতে ফয়সাল না থেমে পুলিশের দিকে আক্রমণ করতে আসতে থাকে। ফলে একজন পুলিশ অফিসার গুলি চালান।
মিডলসেক্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিস এ ঘটনার তদন্ত করছে। অ্যাটর্নি মারিয়ান রায়ান বলেছেন, ফয়সাল যখন অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখাচ্ছিল তখন তাকে আটকানোর জন্য বেশ কয়েকবার বাধা দেওয়া হয়েছিল। তবে ফয়সাল ছোরা নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে তেড়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কেমব্রিজ পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন এলো বলেছেন, ‘আমাদের অফিসাররা বেশ কয়েকবার ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। ওই যুবকের দেখা পাওয়ার পর তাকে নাগালে পেতে পাঁচটি ব্লকের বেশি এলাকায় চেষ্টা চালানো হয়। আমরা পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি।’
ফয়সালকে গুলির ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে গুলি করা হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হতে রেগুলার তদন্ত হবে। এ সময় গুলি করা কর্মকর্তাকে সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
ফয়সালের দেশের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুরের দাঁতমারা গ্রামে। তিনি ইউনিভার্সিটি অব বোস্টনে (ইউম্যাস) পড়াশোনা করতেন। তার পরিবারের প্রায় সকলেই বোস্টনে বসবাস করেন। ৩ বছর আগে সৈয়দ আরিফ ফয়সল ওরফে প্রিন্স বাবা-মার সাথে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজে আসেন। ফয়সাল আরিফের দাদা দাঁতমারার শিক্ষক মরহুম সৈয়দ আবুল বশর। সে মজিবুর রহমান নান্নু এবং শাহেদা বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান। আরিফের বাবা মজিবুর রহমান নান্নু দেশে একজন এমএলএফ ডাক্তার ছিলেন।
বোস্টন প্রবাসীদের বিক্ষোভ সমাবেশ
এদিকে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ফয়সাল আরিফের মৃত্যুর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজ ও বোস্টন প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে ক্যামব্রিজ সিটি হলের সামনে অনুষ্ঠিত উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। প্রবাসীরা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত শিক্ষার্থী সাইদ ফয়সাল ওরফে আরিফকে গুলি করে হত্যাকারী পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। একই সাথে তারা অভিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সংস্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
ফয়সালকে পুলিশ গুলি করে হত্যার ঘটনাটি মুহুর্তের মধ্যে বোস্টনসহ পার্শ্ববর্তী একালায় প্রবাসীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রবাসীরা। ফয়সাল হত্যায় জড়িত দোষী পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যামব্রিজ সিটি হলের সামনে শতশত প্রবাসী জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। উক্ত সমাবেশে বোস্টন ও ক্যামব্রিজসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার নানা শ্রেনীপেশার প্রবাসীরা অংশ নেন। এ সময় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে উক্ত এলাকা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত নির্দোষ শিক্ষার্থী সাইদ ফয়সাল ওরফে আরিফকে পুলিশ কর্তৃক হত্যার ঘটনা আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। বাবা-মার একমাত্র ছেলে ফয়সালের করুণ মৃত্যুতে তার পরিবার ভীষন অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদেরকে সান্তনা দেবার ভাষা আমাদের জানা নেই। তাই দোষী পুলিশদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান প্রবাসী বক্তারা।
ক্যামব্রিজ সিটি মেয়র সুম্বুল সিদ্দিকি ও কাউন্সিলম্যান বুরহান আজিম বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের সাথে বসে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিউ ইংল্যান্ড বাংলাদেশি আমেরিকান ফাউন্ডেশন (নিবাফ)-এর কর্মকর্তারা। ক্যামব্রিজ সিটি মেয়র ও কাউন্সিলম্যানের উদ্যোগে খুব শিগগির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ও পুলিশ কমিশনারের সাথে তারা আলোচনা করবেন উল্লেখ করেন নিবাফ।