নজিরবিহীন অনিয়ম দৃশ্যমান হওয়ায় আড়াই মাস আগে গাইবান্ধা-৫ আসনের যে উপ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেই নির্বাচনের পুনর্ভোট শুরু হয়েছে কড়া নজরদারির মধ্যে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, তীব্র শীত আর কুয়াশার মধ্যেও বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় এ নির্বাচনী এলাকার ১৪৫টি কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়েই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যা একটানা বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে।
শীতের মধ্যে দিনের শুরুতে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম। বেলা বাড়লে ভোটাররা আসতে শুরু করবেন, এই আশায় আছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা।
আগেরবারের মতই ৯৫২টি বুথে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ভোটারের ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসানো সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকে সরাসরি নজরদারি চলছে।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান আগের দিনই সতর্ক করেছেন, এতকিছুর পরও অনিয়মের পুনরাবৃত্তি হলে ছাড় দেওয়া হবে না।
“অনিয়মের গ্র্যাভিটি দেখে সেই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটুকু বলতে পারি, কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় একেবারেই দেব না আমরা।”
গা্ইবান্ধা উপ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্যে কমিশনের তরফে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছেন এ নির্বাচন কমিশনার।
“জেলা প্রশাসন, পুলিশ, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা একসঙ্গে কাজ করে সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত।”
এ উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। তিনিও সুষ্ঠু ভোটের প্রত্যাশার কথা বলেছেন।
পুনর্ভোটে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রতি কেন্দ্রে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ থেকে ১৮ জন সদস্য। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য মনিটরিং সেলও গঠন করা হয়েছে। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে এ মনিটরিং সেল পরিচালিত হবে।
আরো পড়ুন : অনিয়ম পেলে গাইবান্ধায় ফের ভোট বন্ধ : ইসি রাশেদা
আইডিইএ-২ এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েমকে প্রধান করে গঠিত সেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, পুলিশ হেডকোয়াটার্স, বিজিবি, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে আছেন।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২৩ জুলাই মারা গেলে তার সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি।
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে অনিয়মের কারণে কোনো সংসদীয় আসনের নির্বাচন পুরোপুরি (সব কেন্দ্র) বন্ধ করার ঘটনা সেটাই প্রথম।
এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল অনিয়মে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।
কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরে রিটার্নিং অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশের উপ-পরিদর্শক, নির্বাহী হাকিমসহ শতাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচনী এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
এক মাস সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে জানাতে বলা হয়েছে ইসি থেকে।
তবে কোনো ধরনের অনিয়মে সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় প্রার্থী, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়নি।
গত ৬ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের পুনর্ভোটের জন্য ৪ জানুয়ারি নতুন তারিখ ঠিক করে নির্বাচন কমিশন। তারপর প্রার্থীদের নতুন করে প্রচারের সময় দেওয়া হয়। আগের তফসিলে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন, তারাই পুনর্ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাচ্ছেন।