সিজারের (অস্ত্রোপচার) মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার কমলেও ভয়ংকরভাবে বাড়ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। গবেষণা বলছে, সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সিজারের হার দ্বিগুণ।
অতি মুনাফা লাভের আশায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সিজারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এ জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনা জরুরি বলেও জানান তারা।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (নিপোর্ট) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দেশব্যাপী তৃতীয় বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে (বিইউএইচএস) ২০২১-এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
সারাদেশের ৩৫ হাজার ৮৬০ জনের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। ১১টি সিটি করপোরেশনের বস্তি ও বস্তির বাইরের এবং জেলা পৌরসভার অবশিষ্ট শহুরে জনসংখ্যা এবং বড় শহর যেখানে ৪৫ হাজারের বেশি জনসংখ্যা বাস করে এমন এলাকায় এই গবেষণা করা হয়। এতে ১২-৪৯ বছর বয়সী নারী, ১৫-৫৪ বছর বয়সী বিবাহিত পুরুষ, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং সমাজের নেতারা অংশ নেন।
গবেষণা জরিপে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের মধ্যে বস্তি, বস্তির বাইরে এবং জেলা পৌরসভায় সিজারে সন্তান প্রসবের হার সরকারি হাসপাতালে ৪৪ শতাংশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) আওতাধীন প্রতিষ্ঠানে ৪১ শতাংশ।
সিটি করপোরেশনের বস্তি এলাকায় সরকারিতে যেখানে সিজারে সন্তান প্রসবের হার ৪৪ শতাংশ, বেসরকারিতে তা ৭৫ শতাংশ। সিটি করপোরেশনের বস্তির বাইরে সরকারি হাসপাতালে ৫১ শতাংশ, বেসরকারিতে এই হার ৮৭ শতাংশ। পৌরসভার সরকারি হাসপাতালে সিজারে সন্তান জন্মদানের হার ৩৭ শতাংশ হলেও বেসরকারিতে ৮৮ শতাংশ।
এ ছাড়া এনজিওর আওতাধীন এই তিন শ্রেণির (সিটি করপোরেশনের বস্তি, বস্তির বাইরে ও পৌরসভা) প্রতিষ্ঠানে এই হার যথাক্রমে ২৫ শতাংশ, ৫১ শতাংশ এবং ৪৭ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বস্তি এলাকায় জনসংখ্যার হার কমছে। বস্তি ও দরিদ্র মানুষও বাল্যবিবাহ নিয়ে সচেতন হচ্ছে। সবক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বস্তি এলাকায় গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার হার বেড়েছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির হার বাড়লেও সিজার বাড়ছে। এটি কমাতে হবে। এ জন্য প্রান্তিক পর্যায় থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট জনবল। যে পরিমাণ দরকার তার তুলনায় খুবই কম। ফলে স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে কষ্ট হয়।
অনুষ্ঠানে গবেষণা নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ কে এম নুরুন্নবী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি (প্রসব) বাড়লেও সিজারের হার আশঙ্কাজনক। এটি ভাববার বিষয়। এ জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, উপজেলা ও জেলা শহরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বড় একটি গ্যাপ রয়েছে। এটির উন্নতি জরুরি। এটাকে আলাদা অপারেশন প্ল্যানে নেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহান আরা বানু, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা প্রমুখ।