থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাজধানী জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর উন্মুক্ত স্থানে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও কূটনৈতিক পাড়াসহ ঢাকার বিশেষ এলাকা ও স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দেশের অভিজাত হোটেল এবং ক্লাবের সব মদের বার ২৪ ঘণ্টা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশেষ করে দেশের পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা ক্লাব খোলা থাকলেও সেখানকার মদের বারগুলো বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে, থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মুক্তস্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পরে বহিরাগত কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া বনানী, গুলশান, বারিধারা ও হাতিরঝিলে রাত ৮টার পরে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া বছর শুরুর প্রথম প্রহর থার্টি ফার্স্ট নাইটে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানীসহ দেশের অভিজাত হোটেল এবং ক্লাবের সব মদের বার ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে বিভিন্ন ধরনের মাদক উদ্ধার করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকজনকে এরইমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশেষ অভিযানের কারণে কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার জন্য বার বন্ধ রাখা হবে তা নিশ্চিত করতে রয়েছে বিশেষ নজরদারি। এছাড়া অবৈধ মাদক কারবারিদের আনাগোনা যেন না বাড়ে সেজন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে৷ গ্রেফতারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেও বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উত্তর উপ-অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, ইংরেজি নতুন বছর বরণ উপলক্ষে থার্টি ফার্স্ট নাইটে দেশের সকল বার বন্ধ রাখার জন্য নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়া মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের দফতরের সকল কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে পুলিশের টহল চলছে। যেকোনও অঘটনের ঘটনা ঘটলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করতে বলা হয়েছে। এতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে ঢাকা মহানগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। যেকোনও নাশকতা প্রতিরোধে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে ‘কমিশনার’স মিট দ্য প্রেসে’ ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে কোনো আতশবাজি, পটকা কিংবা ফানুস ওড়ানো যাবে না। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার পর ঢাকা মহানগরীর কোনো বার খোলা রাখা যাবে না। পোশাকে ও সাদা পোশাকে রাজধানীজুড়ে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সোয়াত, বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে।
খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, হাতিরঝিল এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। কোনো গাড়ি রাফ চালানো যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পর বহিরাগত কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাড়ি নির্ধারিত সময়ের পর পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে নীলক্ষেত ক্রসিং দিয়ে হেঁটেও প্রবেশ করতে পারবেন তারা।
গুলশান এলাকায় বন্ধ থাকবে যেসব সড়ক
ইংরেজি নববর্ষ (২০২৩) উদযাপনকে ঘিরে ৩১ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা মহানগর এলাকায় শৃঙ্খলা নিশ্চিতে যানবাহন চলাচলে কিছু সাময়িক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির গুলশান ট্রাফিক বিভাগ থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে পরদিন পয়লা জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৫টা পর্যন্ত গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় যানবাহনযোগে প্রবেশের জন্য কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) ও মহাখালী আমতলী ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, রাত ৮টা থেকে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে মহাখালী এলাকা-ফিনিক্স রোড ক্রসিং, বনানী ১১ নম্বর রোড, চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়, ঢাকা গেট, শুটিং ক্লাব, বাড্ডা লিংক রোড, ডিওএইচএস বারিধারা-ইউনাইটেড হাসপাতাল ক্রসিং ও নতুন বাজার ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে না। তবে ওই এলাকা থেকে বের হওয়ার জন্য এসব ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে।
এছাড়াও ২১টি পয়েন্টে ডাইভারশন চলবে। সেগুলো হলো- ফিনিক্স ক্রসিং, শান্তা ক্রসিং, বটতলা ক্রসিং, জিএমজি মোড়, পুরাতন আড়ং ক্রসিং, নিকেতন ক্রসিং, পুলিশ প্লাজা ক্রসিং, মসজিদ গ্যাপ, মায়াগঞ্জ ক্রসিং, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়, বনানী ১১ নম্বর রোড, শুটিং ক্লাব ক্রসিং, ইউনাইটেড হাসপাতাল গ্যাপ, বনানী ২৩ নম্বর রোড, ঢাকা গেইট, মানারাত ক্রসিং, নতুন বাজার ক্রসিং, জাতিসংঘ গোল চত্বর, গুদারাঘাট গ্যাপ, বাড্ডা লিংক রোড ও কালাচাঁদপুর গ্যাপ।
সড়ক ব্যবহার সংক্রান্তে যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে নিচের নম্বরগুলোয় যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
ডিসি (ট্রাফিক গুলশান): ০১৩২০-০৪৪৩৬০, এডিসি (ট্রাফিক গুলশান): ০১৩২০-০৪৪৩৬১, এসি (গুলশান ট্রাফিক জোন): ০১৩২০-০৪৪৩৭২, এসি (মহাখালী ট্রাফিক জোন): ০১৩২০-০৪৪৩৭৫, এসি (বাড্ডা ট্রাফিক জোন): ০১৩২০-০৪৪৩৭৮।
বিজ্ঞপ্তিতে আইনশৃঙ্খলা রাখার লক্ষ্যে যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত ব্যবস্থা বাস্তবায়নকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছে।