ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টানা দশবারের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরদিনই সংগঠন গোছাতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিলেন শেখ হাসিনা। নতুন করে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য সংগ্রহ করা, সদস্য সংগ্রহ তদারকির জন্য বিভাগীয় টিমকে দায়িত্ব দেওয়া এবং তৃণমূলের ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন করার তাগিদ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে গণভবনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
নেতাকর্মীদের নতুন সদস্য সংগ্রহের ওপর জোর দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জাতির পিতা বলে গিয়েছিলেন কেউ দাবায় রাখতে পারবা না, সেটা পারবে না। কাজেই এটা আপনারা সবাই সব সময় মাথায় রেখেই সংগঠনটির ওপর বেশি গুরুত্ব দেবেন; সংগঠনকে শক্তিশালী করবেন, এটাই আমার অনুরোধ।’
এর আগে সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে কেন্দ্রীয় কমিটির নবনির্বাচিত নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। পরে গণভবনে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে তৃণমূল থেকে আসা নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা দল পরিচালনায় সবার সহযোগিতার পাশাপাশি দোয়াও চান।
শনিবার সম্মেলনের শেষ অধিবেশনে নতুন করে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলে সদস্য বৃদ্ধিসহ সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর প্রতি জোর দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
সদস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কিন্তু বই ছাপিয়ে দিয়েছি সদস্য সংগ্রহ করার। এই কাজটা আমাদের প্রত্যেকটা জেলা উপজেলা ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত সকলকে সম্পন্ন করতে হবে এবং মুড়ি বইগুলো ফেরত দিতে হবে। আমরা আবার নতুনভাবে টিম করে দেব একটা বিভাগে; বিভাগীয় যে টিম আমরা করে দেব তাদের ওপর দায়িত্ব থাকবে প্রত্যেকটা জায়গায় সদস্য সংগ্রহ হলো কিনা।
এসময় সারাদেশের ইউনিটগুলোতে যথাসময়ে সম্মেলন করার তাগিদ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘সম্মেলনটা আপনারা যথাযথ সময় করবেন। আমরা নতুনভাবে টিম করে দেব একটা বিভাগের জন্য। প্রত্যেকটা জেলা উপজেলা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত যাদের সম্মেলনগুলো হয় সেটা করা। অনেকগুলো এখনও বাদ রয়ে গেছে; একটাও যেন বাদ না থাকে।
এসময় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় থেকে তারা নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়েনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাজ হচ্ছে জনগণের ভাগ্য গড়া। আর সেটাই আমরা করে যাচ্ছি এবং সেটা আমাদের করতে হবে। মানুষের আস্থা বিশ্বাস এটাই আমাদের বড় শক্তি। আমাদের আর কোনো শক্তি নাই। একমাত্র জনগণের শক্তিতেই আমরা বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগই এ দেশের জনগণের জন্য কাজ করে ও আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের মানুষের আজকে ভাগ্য ফিরে এসেছে।’
আওয়ামী লীগকে মাটি থেকে গড়ে ওঠা সংগঠন আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো মাটি মানুষ থেকে গড়ে ওঠা সংগঠন। আর বিএনপি-জাতীয় পার্টি, এগুলো তো অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলকারী একজন মিলিটারি শাসকের পকেট থেকে বের হওয়া। এরা ভাসমান, কাজেই এদের দায়-দায়িত্বটা জনগণের ওপর নেই। যদিও তারা দাবি করে অনেক বছর ক্ষমতায়। কিন্তু ক্ষমতায় থেকেই তারা নিজেদের ভাগ্য গড়েছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়েনি।’
স্বাধীনচেতা দেশ নিয়ে বড় দেশগুলোর মনোভাবের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক বড় বড় দেশ, আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীরা কখনও এটা পছন্দ করবে না। কিন্তু আমাদের জনগণকে যদি আমরা ঠিক রাখতে পারি তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন, বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি এটা কেউ আটকাতে পারবে না। যেটা জাতির পিতা বলে গিয়েছিলেন কেউ দাবায় রাখতে পারবা না, সেটা পারবে না।’