কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল দেশের সব জেলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণে গণমিছিল করা হয়েছে। এ সময় কোথাও কোথাও পুলিশি বাধার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পঞ্চগড়ে গণমিছিলের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে বিএনপির এক নেতা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেককে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
পঞ্চগড় : গতকাল দুপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেফতার হওয়া নেতাদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির গণমিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হলে পুলিশ বাধা দেয়।
এ সময় নেতা-কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং পুলিশ তখন লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ এক পর্যায়ে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় পার্টি অফিসের দেয়াল টপকে পালানোর সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হন বিএনপি নেতা রশিদ আরেফিন। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রশিদ আরেফিন বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি পাথরাজ এলাকার মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে। এ ছাড়া সংঘর্ষের সময় জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান বাবু এবং পুলিশসহ আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিকেরও বেশি মানুষ। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম কাচ্চু বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল শুরু করি। কিন্তু পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। এক সময় হঠাৎ করেই তারা লাঠিপেটা শুরু করে। পরে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। রাবার বুলেট মারতে থাকে। আমাদের নেতা-কর্মীদের অমানবিকভাবে পেটাতে থাকে। এ ঘটনায় একজন মারা গেছে।’ এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘বিএনপির মিছিলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল। এ সময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল মারতে থাকে। নিজেদের রক্ষার্থে পুলিশ তখন টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে। এ ঘটনায় কেউ মৃত্যুবরণ করেননি। বিএনপির দাবি ঠিক নয়। যিনি মারা গেছেন তিনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন, পরে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।’
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বিএনপির গণমিছিল হয়েছে। কর্মসূচি অনুযায়ী, নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ সংলগ্ন ওয়াসা মোড়ে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির গণমিছিলের পূর্ববর্তী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের রায় হচ্ছে এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই ১০ দফা আমাদের যে দাবি তা পূরণ করতে হবে। এই স্বৈরাচারী সরকার আপোসে তা মেনে নেবে না। তাই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন ফয়সালা হবে রাজপথে। বীর চট্টলার মানুষ সেই ফয়সালা রাজপথে করার জন্য প্রস্তুত।’ সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘কিছু দিনের মধ্যে একটা হুইসেল দেব। সেই হুইসেল মানে সরকার পতনের হুইসেল। তখন লাখ লাখ জনতাকে রাজপথ দখল করতে হবে। আগামী হুইসেলের জন্য অপেক্ষা করেন, দেখবেন সকালে উঠে তারা সবাই পালিয়ে গেছে। আবার জনতা ক্ষমতায় আসবে।’ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
সিলেট : ১০ দফা দাবিতে গতকাল সিলেটেও গণমিছিল করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১টায় সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে মহানগরের রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহান্তরিন করে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে না দিয়ে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের কারাবন্দি করে সরকার বিএনপিকে নেতাশূন্য করার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু চলমান আন্দোলনের মাধ্যমেই সব বন্দিকে মুক্ত করে একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালি পংকির সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী।
গাজীপুর : বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে গাজীপুরে বিক্ষোভ করেছে জেলা বিএনপি। বিকালে শহরের দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তবে বিএনপির নির্ধারিত গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হয়নি। এদিকে বিএনপির সভাস্থলে যাওয়ার পথে ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নানসহ বেশ কয়েকজন দলীয় নেতা বিকালে রাজবাড়ী রোডস্থ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আসেন। দলীয় কার্যালয়ের চারপাশে পুলিশের কয়েক স্তরের বেষ্টনীর ভিতর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই, জনগণের জীবনের নিরাপত্তা চাই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আবার ফিরিয়ে আনব।’ গাজীপুর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপি নেতা মেহেদী হাসান এলিচ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ময়মনসিংহ : বিকালে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল মোড়ে বিএনপির গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে গণমিছিলের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকরা যা করেছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তার চেয়েও বেশি করছে। বাংলাদেশের মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সে জন্য জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে, জীবনও দিয়েছে। জনগণের আন্দোলন কেউ ঠেকাতে পারেনি। জয়লাভ না করা পর্যন্ত সরকার পতনের এই আন্দোলন চলবেই।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ প্রমুখ। পরে বিএনপির একটি গণমিছিল নগরীর টাউন হল থেকে শুরু হয়।
বরিশাল : বিশৃঙ্খলা এবং দুই দফা হাতাহাতির মধ্য দিয়ে বরিশালে গণমিছিল করেছে বিএনপি। মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির দুই গ্রুপ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সমাবেশ শেষে একটি বিশাল গণমিছিলে অংশ নেন তারা।
পরে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে এক সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জনগণ স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে- অবৈধ, ফ্যাসিস্ট, দখলদার, অনির্বাচিত ও নির্যাতনকারী সরকারকে বিদায় নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের একটাই দাবি- এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিতাড়িত করা, পতন করা। বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা, ভোটাধিকার, আইনের শাসন, ভোটাধিকার এবং জীবনের নিরাপত্তা ফিরে পেতে চায়।’
বগুড়া : দুপুরে বগুড়া জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ও সাবেক ডাকসু ভিপি আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘আগামী ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার গণমিছিল থেকে একদফার আন্দোলন শুরু হবে। আওয়ামী লীগের উচিত পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। সেই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় আসবে। যদি সরকার পদত্যাগ না করে তাহলে জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করবে।’
এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা। বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম ও মোশারফ হোসেন, অ্যাডভোকেট এ কে এম সাইফুল ইসলাম, বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন চাঁন ও মীর শাহে আলম, লাভলী রহমান, সহিদ উন নবী সালাম, কে এম খায়রুল বাশার ও জাহিদুল ইসলাম হেলাল, ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল, অ্যাডভোকেট হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, মোর্শেদ মিল্টন, যুবদল নেতা খাদেমুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম শুভ ও আবু হাসান, ছাত্রদলের সাইদুল ইসলাম ও নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান, নাজমা আক্তার প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিএনপি নেতা আমানের নেতৃত্বে গণমিছিল শুরু হয়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
রাজশাহী : রাজশাহী মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত গণমিছিল কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ভাষণে দেশ স্বাধীন হয় নাই, ভাষণে গণতন্ত্রও আসবে না। দেশে এখন গণতন্ত্র নির্বাসিত, গণতন্ত্র গুম হয়ে গেছে। সংসদ বহাল রেখে সংসদ নির্বাচন হতে পারে না। আমদের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা মূলকথা নয়। আমরা চাই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। আমরা ১০ দফা নিয়ে মাঠে নেমেছি। এই ১০ দফার মূলকথা সুষ্ঠু নির্বাচন। যার ভোট সে দেবে, দিনের ভোট দিনে দেবে।’ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তিনি বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যদি বর্তমান সরকার পদত্যাগ না করে, গণআন্দোলনের মাধ্যমে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।’ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, দেলোয়ার হোসেনসহ মহানগর ও জেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নেন।
খুলনা : খুলনায় পুলিশ প্রহরায় গণমিছিল করেছে বিএনপি। বিকালে বিএনপির বিশাল এ মিছিল থানার মোড় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণের পর কেসিসি মার্কেট চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের শুরুতে ও শেষ অংশে কঠোর পুলিশি প্রহরা ছিল। খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি যৌথভাবে এই গণমিছিল কর্মসূচির আয়োজন করে।
এর আগে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু ও খান রবিউল ইসলাম রবি।
বাগেরহাট : বাগেরহাটে বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে দুপুরে ফকিরহাটের কাটাখালী মোড়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ২১ নেতা-কর্মীকে আটক করে। গ্রেফতারকৃতদের বিকালে পুলিশ ফকিরহাট থানায় দায়েরকৃত বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আদালতে পাঠালে বিচারক তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রকৌশলী এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম দাবি করেছেন, বাগেরহাটে গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সকালে শাসক দলের ক্যাডাররা তার বাড়িসহ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালামের কার্যালয়ে ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান এস এম আশরাফুল আলম জানান, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে একদল লোক মিছিল করে দুপুরে ফকিরহাটের কাটাখালী মোড়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২১ জনকে আটক করেছে।
কুমিল্লা : কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় দলীয় অফিসের সামনে গণমিছিলের প্রাক্কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আগামী ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ১০ দফার ভিত্তিতে বাংলাদেশে যে অবৈধ কর্তৃত্ববাদী সরকার, তার পতন ঘটাতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। এই বিএনপি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চায়। কাউকে বাদ দিয়ে রাজনীতি করা বিএনপির আদর্শ নয়।’ কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবুর সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন, সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু প্রমুখ। পরে গণমিছিলটি নগরীর কান্দিরপাড় বিএনপি কার্যালয় থেকে বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
পিরোজপুর : পিরোজপুরে বিএনপির গণমিছিল ছাত্রলীগের হামলায় প- হয়ে গেছে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি তাজা ককটেল উদ্ধার ও ১১ জনকে আটক করেছে।
মেহেরপুর : ১০ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে মেহেরপুর জেলা বিএনপি। বেলা ১১টার দিকে মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণের নেতৃত্বে শহরের কাথুলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কাথুলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুর রহমান, পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মারুফ আহমেদ বিজন, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের গণমিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপি সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। দুপুরে জেলা কার্যালয় বিডিআর রোড থেকে গণমিছিলটি শুরু হয়ে লালমনিরহাট জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিশন মোড় গোল চত্বরে এসে শেষ হয়। বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা প্রমুখ।
লক্ষ্মীপুর : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুরে জেলা বিএনপি গণমিছিল করেছে। মিছিলটি শহরের গোহাটা সামনে থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাসভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় মিলিত হয়। সভায় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান, সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবুসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় শান্তিপূর্ণ গণমিছিল করেছে জেলা বিএনপি। সকালে জয়নগর সার্কিট হাউসের সামনে থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা এই গণমিছিল বের করে প্রধান সড়ক দিয়ে কুরপাড় এলাকায় পুলিশ লাইন মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
রাঙামাটি : দুপুর আড়াইটাই রাঙামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে বিএনপির গণমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বনরূপা পেট্রোলপাম্প এলাকা ঘুরে সমাবেশে মিলিত হয়। মিছিল ও সমাবেশে নেতৃত্ব দেন রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ান, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপের তালুকদার দীপু, সাধারণ সম্পাদক মো. মামুনুর রশিদ মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পনিরসহ নেতারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সকালে শহরের সরকারি কলেজ মোড় থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণে গণমিছিল করেছে বিএনপি। মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পাওয়ার হাউস রোড মোড়ে এসে শেষ হয়। পরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা বক্তব্য রাখেন।
মাদারীপুর : সকালে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় চৌরাস্তা থেকে একটি গণমিছিল বের করা হয়। বিরাট এ মিছিল পুরান বাজার এলাকার মিলন সিনেমা হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলটি দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
সাতক্ষীরা : বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি গণমিছিল করেছে। জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ আবদুর রউফ, যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল হাসান ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে শহরের নিউমার্কেট সংলগ্ন মাওয়া চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এলাকা থেকে মিছিলটি বের হয়ে তুফানকোম্পানি মোড়ে এসে শেষ হয়।
নোয়াখালী : বেলা ১১টার দিকে নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গণমিছিল বের করেন। বিকালে জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসির সভাপতিত্বে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহানের বাসভবনে নোয়াখালী জেলা বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
চাঁদপুর : চাঁদপুরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন ফারুক। বিকালে বিএনপির চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে শহরের চিত্রলেখা মোড় থেকে গণমিছিলটি শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে লেকের পাড়ে অঙ্গীকার পাদদেশে এসে শেষ হয়।
চুয়াডাঙ্গা : বিকালে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত গণমিছিল শুরুর আগেই শহরের কোর্ট মোড় থেকে পাঁচ নেতাকে আটক করে পুলিশ। বিএনপির এক নেতা বলেন, বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রেস ক্লাব চত্বর থেকে বিএনপির গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। নেতা-কর্মীরা কর্মসূচিতে পৌঁছার আগেই চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড় এলাকায় পাঁচ নেতার সঙ্গে পুলিশের বাগবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড় থেকে এই পাঁচ নেতাকে আটক করে পুলিশ। জেলার শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচ নেতা গ্রেফতার হওয়ায় ভেস্তে যায় বিএনপির কর্মসূচি।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী বাবু, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
নবচেতনা /এমএআর