আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন, খ্রিষ্ট ধর্মালম্বীদের শুভ বড়দিন। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বড়দিনকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে খ্রিষ্ট ধর্মালম্বীদের গ্রামগুলো বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। মাটির ঘরবাড়ীগুলোকে নানা ধরনের চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে আকর্ষনীয় দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছেন গৃহবধূরা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলায় ছোটবড় ৩৮ টি চার্চ রয়েছে। বড়দিন উপলক্ষে প্রত্যেকটি চার্চের জন্য সরকারিভাবে ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া নৃ-গোষ্ঠীপাড়া গিয়ে দেখা মেলে খ্রিষ্টধর্মালম্বী ক্যাথলিক মতবাদের গৃহবধূ ভেলি বাস্কের (৩২)। নিজ বসতবাড়ীর মাটির ঘরের দেওয়াল লেপার কাজে ব্যস্ত তিনি। তিনি জানান, যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে ঘরবাড়ী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করাসহ বিভিন্ন সাজে সাজাতে কাজ করছেন তিনিসহ গ্রামের অন্য নারীরাও। বড়দিনের সকালে গির্জায় প্রার্থনা করার পর একে অপরের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করবেন। আপ্যায়ণ পর্বও চলবে সমান তালে। বিকেল থেকে বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে গ্রামে।
একই গ্রামের শিক্ষার্থী আন্তনিকা হেম্ব্রম বলেন, শুভ বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে বাড়ীর নারীদের যেনো কর্মব্যস্ততার শেষ নেই। বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদেরকেও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বাড়ীর কাজে।
একই গ্রামের বসতবাড়ীর মাটিরঘরে লেপামোছার পর দেওয়ালে ফুল অঙ্কন করার কাজে ব্যস্ত খ্রিষ্টধর্মালম্বী ব্যাপটিষ্ট মতবাদের গৃহবধূ লিমা মুর্মু (১৭) বলেন, দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় তার পিতার বাড়ী। গত এক বছর আগে এই গ্রামের অমল হাঁসদার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। এটিই তার শ্বশুরবাড়ীতে প্রথম বড়দিন পালন করা হবে। ইতোমধ্যে ঘরবাড়ী লেপার কাজ শেষ করেছেন। এখন চলছে ঘরের দেওয়ালে বিভিন্ন কারুকার্যের পাশাপাশি বিভিন্ন রঙে ফুল অঙ্কন। বড়দিনে বাড়ীঘর আকর্ষণীয় থাকলে ঈশ্বর যিশু সেখানে আসেন এমন বিশ্বাস থেকেই বাড়ীঘর পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বিভিন্ন রঙে সাজানো হচ্ছে।
উপজেলার ৩নং কাজিহাল ইউনিয়নের কুদবীর মিশনপাড়া গ্রামের গৃহবধূ আলবেনা সরেন (৩৮) বলেন, বছরে একটি মাত্র দিন শুভ বড়দিন। এই দিনে যিশুকে স্মরণ করতে এবং তার পথে চলতে গ্রামের সকলেই ঘরবাড়ী মোছামোছিসহ রংবেরংয়ে সাজানো হচ্ছে ঘরবাড়ী। এসব কিছুই করা হচ্ছে যিশুর সন্তুষ্টি লাভের আশায়।
কুদবীর চার্চ মিশনের সিস্টার প্রীতি গমেজ বলেন, ২৫ ডিসেম্বর ঈশ্বর যিশুখ্রিষ্ট জন্মলাভ করেন। এজন্য দিনটিকে শুভ বড়দিন হিসেবে খ্রিষ্টধর্মালম্বীরা পালন করে থাকেন। বছরঘুরে বড়দিন আবহে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখ সমৃদ্ধিতে জীবনযাপন করার স্বপ্নটাই ধরা দেয় সবার প্রার্থনায়। বড়দিন শুধু বায়িজ্যিক উৎসব নয়, চাই আধ্যাতিক পরিশুদ্ধি। এ বছর বড়দিনের সকাল ৯টায় চার্চে প্রার্থনা এবং ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান হিসেবে আলোচনা ও প্রার্থনা পরিচালনা করবেন চার্জ মিশনের ফাদার জসিম মুর্মু।
এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলায় ছোটবড় ৩৮ টি চার্চ রয়েছে। বড়দিন উপলক্ষে প্রত্যেকটি চার্চের জন্য সরকারিভাবে ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।