সরকার পতন আন্দোলনের কৌশল হিসেবে ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেয়া হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জোটের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে শরিকদের এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়। শরিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে যার যার জায়গা থেকে বা জোট গঠন করে যুগপৎ আন্দোল গড়ে তোলার অনুরোধ করেছে বিএনপি।
তবে জোট ভাঙা নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হবে না বলে জানা গেছে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা না বলতে শরিকদেরও অনুরোধ করেছে বিএনপি।
এরই মধ্যে ২০ দলীয় জোটে থাকা ১২ রাজনৈতিক দল নতুন একটি ‘ফ্রন্ট’ গঠন করতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ জোটের আত্মপ্রকাশ হবে। জোটের সমস্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদাসহ কয়েকজন।
এহসানুল হুদা বলেন, ২০ দল ভেঙে দেয়া হয়েছে তা বলা যাবে না। জোটটি কৌশলগত কারণে নিস্ক্রীয় আছে। যুগপৎ আন্দোলন করার বিষয়ে সবাই সম্মত হয়েছি। সবার জায়গা থেকে যুগপৎ আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলে চলার সঙ্গী হিসেবে যাদের সঙ্গে আমাদের সু-সম্পর্ক রয়েছে তাদের নিয়ে এগোনোর আগানোর চেষ্টা করছি। কৌশলগত কারণে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপির ১০ দফার আলোকে আমরা আন্দোলন করবো।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, এই ২০ দল কার্যকর নাই। যার কারণে আমরা ১২টি দল আগামী আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য বৃহস্পতিবার একটা জোটের ঘোষণা দেবো। ২০ দলে এখন আমরা আর নাই। ২০ দল থেকে সক্রিয় ১২ দল এখন স্বতন্ত্র জোটে থাকবে।
২০ দলের নিস্ক্রীয়তার কারণে ছোট দল ক্ষতির সম্মুখীন হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাভ-ক্ষতির কিছু নেই। রাজনীতিতে কত সিদ্ধান্তই আসবে। রাজনীতি হচ্ছে একটা চলমান প্রক্রিয়া।
১২ দলের জোটে থাকছে- মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল, এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এলডিপি, অ্যাডভোকেট জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট, কমরেড নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ও অ্যাডভোকেট আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।
এছাড়া আরো ৭টি দলও আলাদা জোট গঠনের চেষ্টা করছে। তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি এককভাবে কর্মসূচি পালন করবে।
এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ২০ দল অনেকদিন যাবত নিস্ক্রীয়। ৭ দল দিয়ে এ মাসেই আমরা নতুন জোটের ঘোষণা দেবো। আমরা আলাদাভাবে জোট করে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছি। ২০ দলের আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা যায়, সরকারবিরোধী ডান-বাম ও ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চায় বিএনপি। এক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোট হিসাবে সামনের যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিলে জামায়াত বিভিন্ন রাজনৈতিক বিবেচনায় অন্তরায় হিসাবে বিবেচিত হবে। এজন্য ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জোট ভেঙে দেয়ার পর যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত রাজপথে থাকলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কোনো আপত্তি থাকবে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা এখন জোটগতভাবে না, যুগপৎ আন্দোলন করবো। যার যার অবস্থান থেকে এই আন্দোলন এগিয়ে নেবো। ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সরকরের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলেন যারা শেষ পর্যন্ত রাজপথে থাকবে তাদের নিয়ে পরবর্তীতে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।
প্রসঙ্গত, চারদলীয় জোটের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮ দল এবং পরে পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি দল নিয়ে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়। ডানপন্থি ও মধ্য-ডানপন্থি দলগুলোর সমন্বয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী এ জোট গড়ে উঠেছিল।