স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পালগাঁও গ্রামের মোঃ সালাউদ্দিন সালাম শাহ্। নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করা এই অকুতোভয় বীর সেনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান মৃত্যুর আগে।
দীর্ঘদিন যাবৎ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেট ভুক্তী করণের জন্য বারবার আবেদন করেছেন। তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক আতাউল গণী ওসমানীর স্বাক্ষরিত দেশরক্ষা বিভাগের স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ, স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রত্যয়ন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কালিয়া শাখার প্রত্যয়ন, মুক্তিযুদ্ধা মেজর আফসার উদ্দিনের সাক্ষরিত প্রশংসা পত্র যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ থাকার পরও তিনি পাচ্ছেন না স্বীকৃতি।
আতাউল গণী ওসমানীর স্বাক্ষরিত সনদপত্র বয়সের ভারে এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন মোঃ সালাউদ্দিন সালাম শাহ্। তারপরও হাল ছাড়ছেন না। মৃত্যুর আগে শুধু মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু পাওয়ার আশায় ঘুরছেন বিভিন্ন অফিসের দপ্তরে। এরই মধ্যে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়েও গিয়েছেন। মৃত্যুর আগে আদৌও স্বীকৃতি মিলবে কিনা এটাই এখন তার প্রশ্ন?
মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন সালাম শাহ্ সাথে কথা হলে,তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘যুদ্ধের সময় আমাদের যারা ভাত রান্না করে দিত তারাও আজ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছে। অথচ আমি নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আমার স্বীকৃতি মিলছেনা। আমি কোন ভাতা চায়না। আমি শুধু মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতিটুকু চায়। এটাই আমার শেষ চাওয়া।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্যয়ন পত্র এ সময় তিনি আরোও বলেন, ‘১৯৭১ সালে যুদ্ধে কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে ১১নং সেক্টরে ময়মনসিংহ সদর দক্ষিণ ও ঢাকা সদর উত্তর মুক্তিবাহিনীতে সক্রিয়ভাবে ০৫/০৮/১৯৭১ ইং থেকে ২৮/০১/১৯৭২ ইং পর্যন্ত বিভিন্ন সম্মুখ সরাসরি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। যাহার সিপাহি নং- ৬১২৫২০। আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে এবং আমার মাকে নির্যাতন করেছে। ১৯৭১ সালে আমার বয়স যখন ১৮ বছর আমি যুদ্ধরত অবস্থায় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতিত সহ পায়ে গুলিবিদ্ধ হই। এছাড়াও বুকের বাম পাঁজরে হাড় ভাঙ্গা সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন বিদ্যমান ও ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি।
দেশ স্বাধীন হলো সেদিন থেকে ভারসাম্যহীন হয়ে সময় সময় বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে থাকি এবং অসুস্থ অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। ক্রমান্বয়ে শারীরিক অবস্থা উন্নতি হতে লাগলে কামারিয়া বাজারের কবর স্থানের পাশের দরবারে এলাহীতে স্ত্রী ৪ মেয়ে ২ ছেলেকে নিয়ে ভূমিহীন অবস্থায় বর্তমানে মানবতার জীবন যাপন করিতেছি। অনেকেরই নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শুধু আমারটা হয়নি।’
এ বিষয়ে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ২০১৪ সালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। পরে মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি আসে। আর সেখানে লেখা থাকে, ওই তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অতিরিক্ত হয়েছে। পুনরায় যাচাই-বাছাই করার জন্য মন্ত্রণালয় নির্দেশ দেন।